সন্তানের অধিক চাহিদা পূরণ করা অনেক বাবা-মায়ের কাছে ভালোবাসা প্রদর্শনের একটি উপায় হতে পারে। তবে, যখন সন্তানের সব চাহিদা দ্রুত এবং সহজে পূরণ করা হয়, তখন তা শিশুর মানসিক, সামাজিক ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এই আচরণ শিশুকে ধৈর্য, সংযম ও কৃতজ্ঞতা শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, যা ভবিষ্যতে তাদের জীবনে নানা সমস্যার কারণ হতে পারে।
![]() |
সন্তানের অধিক চাহিদা: সুরক্ষার পর্দা নাকি বিপদের সংকেত? | BongoCyber |
১. ধৈর্য এবং সংযমের অভাব:
যখন শিশুরা কোনো কিছু চায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা পেয়ে যায়, তখন তারা ধৈর্য এবং সংযম শেখার সুযোগ হারায়। তারা অপেক্ষা করতে বা কোনো কিছুর জন্য পরিশ্রম করতে শেখে না। এর ফলে, ভবিষ্যতে তারা জীবনের কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে কষ্ট পায়। উদাহরণস্বরূপ, স্কুলে বা খেলাধুলায় যখন তারা সফল না হয়, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে কারণ তারা ব্যর্থতা মোকাবিলা করার ধৈর্য অর্জন করতে পারে না।
২. বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ বোঝার অভাব:
অধিক চাহিদা পূরণ হলে শিশুরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে পারে না। তারা মনে করে, জীবনের সবকিছু খুব সহজে পাওয়া যায়। তবে বাস্তব জীবন কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সংগ্রাম দাবি করে। শিশুরা যখন এই শিক্ষা পায় না, তারা বড় হয়ে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জনের গুরুত্ব তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়।
৩. কৃতজ্ঞতা এবং দায়িত্ববোধের অভাব:
যখন শিশুর সব চাহিদা পূরণ করা হয়, তখন তারা কৃতজ্ঞতা শেখে না। তারা যা পায় তার প্রতি কোনো মূল্যবোধ তৈরি হয় না, কারণ তারা সবকিছুকে অধিকার বলে ধরে নেয়। এর ফলে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধও গড়ে ওঠে না। তারা মনে করে, সবকিছু পাওয়া স্বাভাবিক, এবং তাদের কোনো কিছু অর্জনের জন্য পরিশ্রম বা দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে ভবিষ্যতে তারা আরও স্বার্থপর এবং অসামাজিক হয়ে উঠতে পারে।
৪. পারিবারিক চাপ ও বিরোধ:
বেশিরভাগ সময় সন্তানের অধিক চাহিদা পূরণের জন্য বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। একপক্ষ সন্তানের সব চাহিদা পূরণ করতে চান, অন্যপক্ষ মনে করেন এতে সন্তানের ক্ষতি হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি পারিবারিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং পরিবারের অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট হতে পারে। এতে পরিবারে মানসিক চাপ তৈরি হয় এবং শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. সমাধানের উপায়:
সন্তানের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাবা-মাকে কিছু কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। প্রথমত, সন্তানের চাহিদা এবং প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য শেখানো জরুরি। সবকিছুই পাওয়া সম্ভব নয়, এবং কিছু জিনিস পেতে পরিশ্রম করতে হয়—এই শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের মাঝে কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে বাবা-মায়েরা তাদের ছোটখাটো দায়িত্ব দিতে পারেন, যেমন ঘরের কাজ বা স্কুলের দায়িত্ব।
উপসংহার:
সন্তানের অধিক চাহিদা পূরণ করা তাৎক্ষণিকভাবে সন্তানের জন্য আনন্দদায়ক হতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে নেতিবাচক। পরিমিতিবোধ, ধৈর্য, এবং কৃতজ্ঞতা শেখানোর মাধ্যমে সন্তানকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করা বাবা-মায়ের অন্যতম দায়িত্ব।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.