Adds

বিবাহবিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার কি | ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদে যা জানা জরুরি

বিয়েতে “কুফু”র গুরুত্ব: একটি সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি। বিবাহবিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানুন। মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সম্পর্কের স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সমাধান। 


বিবাহবিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার কি | ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদে যা জানা জরুরি
বিবাহবিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার কি | ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদে যা জানা জরুরি | BongoCyber 


❑ কুফু(كُفُو) ❑ 

বিয়ের ক্ষেত্রে “কুফু” একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ”


“তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং 'কুফু' বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও 'কুফুর' প্রতি লক্ষ্য রাখো।” [১]


● এখন 'কুফু'-র অর্থ কি?

“কুফু” (كُفُو) একটি আরবী শব্দ; যার অর্থ সমান, সমতুল্য, সমতা, সমকক্ষ [২]।


ইসলামী পরিভাষায় বর-কনের দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় কিছুতে সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে “কুফু” বলে। বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলা হয়।[৪]


অতএব, একে একটি সম্ভাব্য স্বামী এবং তার সম্ভাব্য স্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য বা সমতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই সামঞ্জস্য ধর্ম, সামাজিক মর্যাদা, নৈতিকতা, ধার্মিকতা, সম্পদ, বংশ বা রীতিনীতির অন্তর্ভুক্ত একাধিক কারণের উপর নির্ভরশীল।[৫] সাধারণত ধর্মীয় নৈতিকতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও আলেমগণ কনের তুলনায় বরের সার্বিক অবস্থানকে কাছাকাছি কিন্তু তুলনামূলক উত্তম হওয়া সুবিধাজনক বলে পরামর্শ দেন।


● বিয়ের ক্ষেত্রে “কুফু” কেন গুরুত্বপূর্ণ আসুন একটি উদাহরণ দেখি:

ধরুন, A একটি দ্বীনদার মেয়ে এবং B একটি বেদ্বীন ছেলে। এখানে কুফু নেই। দুজনের মধ্যে বিবাহ হলে, মেয়েটি তার দ্বীনকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে টেনে আনে। অপরপক্ষে, বেদ্বীন ছেলেটি চাইবে দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে। ফলে সৃষ্টি হবে অশান্তি এবং শেষ পরিণতি হবে 'তালাক'।


এবার আরেকটি উদাহরণ:

ধরুন, আপনার মাসিক আয় ১০,০০০ টাকা। আর আপনি এমন কাউকে বিয়ে করলেন যার বাবার মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা। অর্থনৈতিক অবস্থানে 'কুফু' নেই। কি মনে হয় সুখে থাকবেন? নাহ।


হাতি-ওয়ালার সাথে বন্ধুত্ব করলে হাতি রাখার মত ঘর বানাতে হবে। নতুবা ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণে চাঁদ।’ বুঝলেন?


অতএব, আপনার রোজগার ১০,০০০ টাকা হলে, আপনার বিয়ে করা উচিত এমন কাউকে যে এরমধ্যেই মানিয়ে চলতে পারবে। নয়তো বিয়ের পর শুনতে হতে পারে, ‘ভুল করেছি তোমায় বিয়ে করে, দাও এবার আমার হাতটি ছেড়ে ’।


সারসংক্ষেপ:

নিজের চলাফেরা, পোশাক আশাক, বাড়িঘর, থাকা খাওয়ার মান সবকিছুর মধ্যে কুফু থাকা উচিৎ।


এতে কেউ কারোর উপর গর্ব প্রকাশ করবেনা, খোঁটা দেবেনা; ভালোবাসার গতিও বাধাগ্রস্ত হবেনা।


সব বিষয়ে 'কুফু' বিবেচনা করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা উচিত।


যদি সবকিছুতেই 'কুফু' মিলে যায় তবে তো সোনায় সোহাগা এবং এমন দাম্পত্য হবে চিরসুখের। পক্ষান্তরে, কিছু না পেলেও যদি শুধুই দুজনের মধ্যেই দ্বীনদারী থাকে তবে সুখের জন্য এটাই যথেষ্ট। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।


◆ শেষ কথা:

অনেকে বলতে পারেন, “কোনো ব্যাপার না, বিয়ে করে মেয়েকে দ্বীনদার বানিয়ে নেব।” ভাই, এটা স্রেফ একটি শয়তানের ধোকা। উল্টোও তো হতে পারে; দেখা গেল দ্বীনদার বানাতে গিয়ে আপনি নিজেই বেদ্বীন হয়ে গেলেন।


বরং একটি কাজ করা যেতে পারে, বিয়েতে দ্বীনকে কন্সট্যান্ট রেখে [এখানে কোন ডিসকাউন্ট নেই, দুঃখিত] অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়গুলি সামান্য হেরফের করে এডজাস্ট করা যেতেই পারে। আসলে সবকিছুই নির্ভর করছে দ্বীনদার কেমন তার ওপরে। যত বেশি দ্বীনদারী থাকবে, ততোই বাকিগুলোর গুরুত্ব কমবে।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“ليَتَّخذَ أحَدُكُمْ قَلْباً شَاكِراً وَلِسَاناً ذَاكراً وَزَوْجَةً صَالِحَةً تُعينُهُ عَلَى أَمرِ الآخِرَة”


“তোমাদের প্রত্যেকের কৃতজ্ঞ অন্তর ও যিকিরকরি জিহ্বা হওয়া উচিৎ। আর এমন মুমিনা স্ত্রী গ্রহণ করা উচিৎ; যে তার আখেরাতের কাজে সহায়তা করবে।” [৩]


আখিরাতের কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর কুফু থাকতে হবে। স্ত্রীকে অবশ্যই দ্বীনদারিতে স্বামীর বরাবর বা কাছাকাছি থাকতে হবে, নচেৎ সে আখিরাতের কাজে সহায়তার থেকে বাধা বেশি দেবে এবং অনেকক্ষেত্রে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে আপনাকে জাহান্নামের পথেও টানবে।

“رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَاماً”


[১] সুনান ইবনু মাজাহ : ১৯৬৮ ; সহীহ

[২] আল-ওয়াফি ডিকশনারি

[৩] ইবনে মাজাহ: ১৮৫৬, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ : ২১৭৬

👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇

Post a Comment

0 Comments