বাঙালির ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। শীতের পিঠা পুলি তৈরিতে খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। দেখুন কীভাবে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়।
![]() |
খেজুর গাছের রস থেকে গুড় তৈরি | উত্তরবঙ্গের রসের হাড়ি | khejurer ros theke gur toiri | BongoCyber |
ভিডিও দেখুন 👇
বাঙালির ঐতিহ্য: খেজুরের রস 🍯 ও গুড় 🌿
শীতকালীন প্রধান আকর্ষণ হল খেজুরের রস 🍯 ও খেজুরের গুড় 🌿। এই দুটি উপাদান বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান অধিকার করে এবং শীতের পিঠা পুলি তৈরিতে গুড়ের তুলনা নেই! 🥞 খেজুরের গুড়ের স্বাদ উপভোগ করতে, হেমন্তের শুরু থেকেই গ্রামের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়।
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া
1. গাছ নির্বাচন:
গাছিরা খেজুর গাছ পর্যবেক্ষণ করে কোন গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবেন তা নির্বাচন করেন। সাধারণত গাছগুলির বয়স, স্বাস্থ্য ও অবস্থার ভিত্তিতে এই নির্বাচন করা হয়।
2. রস সংগ্রহের উপকরণ:
ধারালো কাঁচি ✂️
ছোট ও মাঝারি ঘটি/হাঁড়ি 🍶
মোটা রশি 🔗
চুন 🧂
3. রস সংগ্রহের প্রস্তুতি:
মাটির হাঁড়ির ভিতরের অংশে চুন দিয়ে কয়েক দিন রৌদ্রে শুকিয়ে রস রাখার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
4. গাছের ছাঁটাই:
শীতের শুরুতে ধারালো কাঁচি দিয়ে খেজুর গাছের পুরাতন ডাল কেটে দেন। যে দিকটায় রস সংগ্রহ হবে, সেদিকে ত্রিভুজ আকৃতিতে বেশি করে কাটা হয়। এতে গাছের দেহের সাদা অংশ বের হয়, যা রসের উৎস।
5. রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া:
ছাঁটাই করা ডালগুলি ঘরের বেড়া ও রান্নাঘরের ছাদ তৈরিতে ব্যবহার হয়। অনেক সময় এই ডালগুলি শুকিয়ে জ্বালানির কাজেও লাগে।
শীত শুরু হলে গাছের মাথা থেকে রস বের হতে শুরু করে। গাছিরা গাছের বয়স অনুসারে দু-এক দিন অন্তর রস সংগ্রহের জন্য কেটে দেন।
রস জমা করার উপায়
ত্রিভুজ আকৃতির কাটার সুবিধা:
রস গড়িয়ে নিচের দিকে জমা হয়। এই অংশে বাঁশের নলা টিনের ফালা যুক্ত করে দেওয়া হয়, যাতে রস ঘটি বা হাঁড়িতে জমা হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
শক্ত বাঁশের ফলা বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে হাঁড়ি রশির মাধ্যমে ঝুলিয়ে রাখা যায়। গাছে ওঠার জন্য শক্ত ও মোটা রশি ব্যবহার করা হয়, যাতে গাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
রস সংগ্রহের সময়সূচী
প্রতি এক-দুই দিন পর দুপুরে গাছের গলা ছেটে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এটি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে।
ভোরে রসে পরিপূর্ণ হাঁড়ি নামানোর কাজ শুরু হয়।
রস সংরক্ষণ
রস সংগ্রহের জন্য হাঁড়িগুলি সাধারণত মাটির তৈরি হয়।
এগুলি ধুয়ে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে দেওয়া হয়, যাতে পোকা বা ছত্রাকের আক্রমণ না ঘটে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব
শীতের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে গাছিদের খেজুর গাছের রস সংগ্রহ এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোরে রসের হাঁড়ি নামানোর দৃশ্য গ্রামীণ জনপদের একটি মনোমুগ্ধকর চিত্র। 🌅 এই খেজুরের রস কিছু গাছে বিক্রি করা হয় এবং কিছু গাছি রস থেকে সুস্বাদু খেজুরের গুড় তৈরি করেন, যা প্রতিটি মানুষের কাছে অত্যন্ত সুস্বাদু। 🍬
খেজুরের গুড়ের ব্যবহার
পিঠা তৈরিতে: বিভিন্ন পিঠা, যেমন পাটিসাপটা, চিতল পিঠা, এবং পিঠার মধ্যে গুড় ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা: খেজুরের গুড় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ।
খেজুরের রস ও গুড় শুধু একটি খাদ্য উপাদান নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীতকালীন আনন্দের সঙ্গে এর মিষ্টি স্বাদ একটি বিশেষ আনন্দের অনুভূতি এনে দেয়।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.