মুসলিম নারী-পুরুষেরা রাস্তাঘাটে চলার পথে হোঁচট খেলে কোন দু'আ পাঠ করবে?
![]() |
| রাস্তাঘাটে চলার পথে হোঁচট খেলে কোন দু'আ পাঠ করবে | BongoCyber |
চলার পথে হোঁচট খেলে কিংবা শয়তানের পক্ষ থেকে কেউ আক্রমণের শিকার হলে বিসমিল্লাহ বলা এবং অভিশপ্ত শয়তানের কাছ থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব যদি কোনো মুসলিম চলাচলের পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় কিংবা কোন কারণে ভয়ে ভীত হয়, তাহলে তার জন্য শরীয়তের বিধান হলো: তার পালনকর্তা মহান রবকে স্মরণ করা এবং অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং বিসমিল্লাহ বলা।
এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন;
اِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা আরাফ; ৭/২০০)
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম আল আমীন শানক্বীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: " بين في هذه الآية الكريمة ما ينبغي أن يعامل به الجهلة من شياطين الإنس والجن، فبين أن شيطان الإنس يعامل باللين، وأخذ العفو، والإعراض عن جهله وإساءته، وأن شيطان الجن لا منجى منه إلا بالاستعاذة بالله منه "
তিনি (আল্লাহ) এই মহৎ আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, কীভাবে মানব শয়তান এবং জ্বীন শয়তানের সাথে আচরণ করতে হবে। তিনি বর্ণনা করেছেন; মানব শয়তানের সাথে নম্রভাবে আচরণ করতে হবে, ক্ষমাকে গ্রহণ করতে হবে এবং তার জাহালাত (অজ্ঞতা) আর কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর জ্বীন শয়তানের ব্যাপারে বলেছেন আল্লাহ তাআলার নিকটে জ্বীন শয়তান থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
(আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহুল কুরআন বিল কুরআন, খন্ড:৮ পৃষ্ঠা:৯০)
তাছাড়া রাসূল (ﷺ) থেকে একটি বিশুদ্ধ হাদিস এসেছে, আবুল মালীহ (রাহিমাহুল্লাহ) এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন-
আমি একটি সওয়ারীতে নবী করীম (ﷺ)-এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার সওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
لَا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطَانُ، فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الْبَيْتِ، وَيَقُولُ: بِقُوَّتِي، وَلَكِنْ قُلْ: بِسْمِ اللهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الذُّبَابِ
একথা বল না, যে শয়তান ধ্বংস হয়েছে, কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মত বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতা হয়েছে। অতএব বল, বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর নামে। যখন তুমি বিসমিল্লাহ বলবে শয়তান ছোট হতে হতে মাছির মত হয়ে যাবে।
(আবু দাউদ হা/৪৯৮২; মুসনাদে আহমাদ হা/২০৮৬৭; সহীহুল জামে ৭২৭৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৩১২৮, ৩১২৯; সনদ সহীহ)
যখন কোন বান্দা শয়তানকে অভিশাপ দেয়, তখন সে বলে; তুমি অভিশপ্ত ব্যক্তিকে অভিশাপ দিচ্ছ। অনুরূপ বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ তাআলা শয়তানকে অপমান/অপদস্থ করেছেন। এ সবই তাকে খুশি করে এবং সে বলে, "আদম সন্তান জানে যে আমি আমার শক্তি (ক্ষমতা) দ্বারা তা অর্জন করেছি।" এটি তাকে প্রলুব্ধ করতে সাহায্য করে, কিন্তু এটি তার কোন উপকারে আসে না।
তাই নবী ﷺ) বলেছেন;
যে ব্যক্তিকে শয়তান স্পর্শ করে, সে যেন আল্লাহকে স্মরণ করে, বিসমিল্লাহ বলে এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে পরিত্রাণ চায়। কারণ এটি তাঁর জন্য সর্বাধিক উপকারী ফলদায়ক।(এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি) এবং শয়তানকে বিরক্ত করে, লাঞ্ছিত করে।
(যাদুল মায়াদ; খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৩৫৫ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৭৪৮৪৫)
সূরা আরাফে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
‘এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নাবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করতনা।’ (সূরা আনআম; ৬:১১২)।
পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা প্রতিয়মান হয় তা হচ্ছে- শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে মানুষের ভিতরে-বাইরে, শয়নে-স্বপনে, দিবা-নিশি সর্বাবস্থায় পথভ্রষ্ট করার সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সে আমাদের পিতা আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করেছে। সে আমাদের পিতা আদম (আঃ)-কে সিজদা না করায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তার প্রতি ছিল চরম অভিশাপ।
তাই প্রত্যেক মুমিনের উঠতে, বসতে, হাঁটতে সর্বাবস্থায় সয়তানের যাবতীয় চক্রান্ত থেকে হেফাজতে থাকতে হবে এবং মহান আল্লাহর কাছে তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇

0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.