সূর্যগ্রহণ (🌒) দেখার বা উদযাপন করার বিষয় নয়। বরং, এর সুন্নাত আমল হলো: আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (🙏), দোয়া (👐), নামাজ (🕌) পড়া এবং সাদকা দেওয়া (💰)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সূর্যগ্রহণ অতিবাহিত করেছেন।
![]() |
সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম | সূর্য গ্রহণের সময় আমাদের কি করতে হবে | BongoCyber |
সূর্যগ্রহণ নিয়ে মাতামাতি, তা দেখতে যাওয়া বা গল্প-গুজবে সময় নষ্ট না করে নামাজ ও প্রার্থনায় সময় কাটানো জরুরি। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সতর্ক করার জন্য আকাশে নানা নিদর্শন দিয়েছেন। সুরা বনি ইসরাঈলে আল্লাহ ঘোষণা করেন:
وَمَا نُرْسِلُ بِالاٌّيَاتِ إِلاَّ تَخْوِيفًا
অর্থাৎ, "আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নিদর্শনাবলি প্রেরণ করি।" (সুরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ৫৯)
তাই সূর্যগ্রহণের সময় হাসি-তামাশা ছেড়ে ভয়কে অন্তরে জাগ্রত রাখাই মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। হাদিসেও এ বিষয়টি উল্লেখিত। তাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা সূর্যগ্রহণের সময় তাঁর ভয়ে ভীত থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন।
সূর্যগ্রহণের সময়ের নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন, যাকে 'সালাতুল কুসুফ' বলা হয়। সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়া সুন্নাত, এবং জামাআতের সঙ্গে আদায় করাও সুন্নাত।
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। দশম হিজরিতে যখন মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের জন্য লোকজনকে সমবেত করেন। সম্ভবত তখন তিনি জীবনের দীর্ঘতম নামাজের জামাআতের ইমামতি করেছিলেন।
সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সেজদাহ—সবকিছুই সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক দীর্ঘ ছিল। হাদিসে এসেছে:
হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে থাকাকালে সূর্যগ্রহণ শুরু হলো। তখন তিনি নামাজ পড়তে শুরু করলেন এবং বললেন যে, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণ কোনো মৃত্যুর কারণে ঘটে না। তোমরা যখন গ্রহণ দেখবে, তখন নামাজ পড়ো এবং দোয়া করো।’ (বুখারি)
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, সালাতুল কুসুফ বা সূর্যগ্রহণের নামাজ দুই রাকাআত। এই নামাজ সূর্যগ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হয়।
সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম
সূর্যগ্রহণের নামাজ ২ রাকাআত। সাধারণ নামাজের মতোই এ নামাজ পড়তে হয়, তবে প্রতি রাকাআত অনেক দীর্ঘ করতে হয়। হাদিসে এসেছে:
হজরত আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘একবার সূর্যগ্রহণ হলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে ঘোষণা দিতে পাঠান যে, জামাআতে নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই একত্রিত হলে তিনি দুই রাকাআত নামাজ পড়লেন। দুই রাকাআতে চারটি রুকু ও চারটি সেজদা করলেন।’ (মুসলিম)
সূর্যগ্রহণের নামাজে আজান ও ইকামত নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত ছাড়া মসজিদে জামাআতের সঙ্গে নামাজ পড়া সুন্নাত। দিনের বেলায় সূর্যগ্রহণ ঘটে এবং নামাজে কেরাত আস্তে পড়ার নিয়ম।
হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে ২ রাকাআত সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়লেন, কিন্তু উভয় রাকাআতে আমরা তাঁর কেরাতের আওয়াজ শুনিনি।’ (আবু দাউদ)
সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামাজ পড়া সুন্নাত। তবে সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে নামাজ শেষ করলেও সমস্যা নেই। তবে এ সময় জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
সূর্যগ্রহণের সময় নারীদের করণীয়
নারীরাও সূর্যগ্রহণের সময় ঘরে একাকি নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফার, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
এই সময় মুমিন মুসলমান নামাজ আদায় করবে এবং তাওবা, ইসতেগফার, দোয়া ও দান-সাদকাহ করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সূর্যগ্রহণের সময় সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সব ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.