আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথম স্ত্রী সারাহ (রা:)-এর গর্ভে একমাত্র পুত্র ইসহাক্ব (আঃ) ছিলেন। ইবরাহীম (আঃ) জীবদ্দশায় ইসহাক্বকে রাফক্বা বিনতে বাতওয়াঈল (رفقا بنت بتوائيل) এর সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু, তাঁরা সন্তানহীনা ছিলেন।
![]() |
বনী ইসরাইল কারা? মিশরের পিরামিডে ফেরাউনের লাশ রয়েছে; উক্ত বিষয় টি কতটুকু সঠিক? | BongoCyber |
পরে আল্লাহর বিশেষ দোয়ার বরকতে ইবরাহীম (আঃ) আরও দুটি পুত্র সন্তান লাভ করেন: ঈছ ও ইয়াকুব। তাদের মধ্যে ইয়াকুব (আঃ) নবী হন এবং তাঁর অন্য নাম "ইসরাইল", যার অর্থ আল্লাহর দাস। তাই ইয়াকুব (আঃ)-এর বংশধরদের "বনী ইসরাইল" বলা হয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাদেরকে "বনী ইসরাইল" বলেই উল্লেখ করেছেন, যাতে তারা ‘আল্লাহর দাস’ এ সত্যটি মনে রাখতে পারে।
ফেরাঊনের পরিচয়:
‘ফেরাঊন’ আসলে কোনো একক ব্যক্তির নাম নয়; এটি মিশরের তৎকালীন নবাব বা রাজাদের উপাধি। ক্বিবতী বংশীয় এই সম্রাটগণ কয়েক শতাব্দী ধরে মিশর শাসন করেছিল, যখন মিশর সভ্যতা ও সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছেছিল। তাদের সময়ের বৈজ্ঞানিক উন্নতির প্রমাণস্বরূপ রয়েছে লাশ মমিকরণ, পিরামিড ও স্ফিংক্স।
আল্লাহর নবী ইউসুফ (আঃ)-এর অনেক বছর পরে এই ফেরাঊনরা ক্ষমতায় আসে এবং শিরক ও কুফরে লিপ্ত হয়। ইউসুফের সময় থেকে মিশরে হিজরতকারী সম্মানিত বনী ইসরাইলকে তারা খাদেম এবং ক্রীতদাস হিসেবে পরিণত করে এবং তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে।
বনী ইসরাইলদের মুক্তির জন্য আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে নবী করে পাঠান। ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীরা মূসা ও তাঁর ভাই হারূণের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। মূসা মিশরে ২০ বছর অতিবাহিত করেন এবং মিশরবাসীকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে থাকেন। ফেরাঊনের অহংকারের কারণে আল্লাহ তাদের ওপর নানা গযব পাঠাতে থাকেন, যেমন: অভাব, প্লাবণ, পঙ্গপাল, চুলের পোকা, ব্যাঙ, রক্ত, প্লেগ ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি গযবের পর ফেরাঊনের লোকেরা মূসার কাছে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতো, কিন্তু গযব উঠে গেলে পুনরায় অবাধ্য হয়ে যেত। ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীরা এসবকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মনে করতো, ফলে তাদের অত্যাচার অব্যাহত ছিল।
অবশেষে চূড়ান্ত শাস্তি এসে ফেরাঊন ও তার সৈন্যদল সমুদ্রের মধ্যে ডুবে যায়। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত একাধিক আয়াতে এই ঘটনার বর্ণনা আছে:
> “আমরা অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতেরবেলা বের হন। সুতরাং আপনি তাদের জন্য সাগরের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথের ব্যবস্থা করুন…” (সূরা ত্বহা; 77-78)।
এছাড়া সূরা আশ-শু'আরা এবং সূরা বাকারাহতেও এই ঘটনা উল্লেখ রয়েছে।
ফেরাঊনের ডুবের সময় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমি মেনে নিয়েছি যে আর কোনো ইলাহ নেই সেই ইলাই ছাড়া…” (সূরা ইউনুস; 90)। কিন্তু, এ শেষ মুহূর্তের ঈমান গ্রহণের কোনো মূল্য ছিল না, কারণ তিনি ছিল নাফরমানী ও ধ্বংসের পথে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এখন! পূর্বে তুমি নাফরমানী করছিলে। আজ আমি তোমার লাশটাকে রক্ষা করছি, যাতে পরের প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।” (সূরা ইউনুস; 91-92)।
মিশরে ফেরাউনের লাশ:
কুরআন ও সুন্নাহতে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই যে, মিশরের জাদুঘরে ফেরাউনের লাশ রয়েছে। সূরা ইউনুসের 92 নম্বর আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার কারণে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে,
“আজ আমরা তোমার দেহটি রক্ষা করব…” (সূরা ইউনুস; 92)।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, বনী ইসরাইল ফেরাউনের মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিল না, তাই আল্লাহ তাঁর মৃতদেহকে উত্তোলন করে রেখেছিলেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, ফেরাউনের মৃতদেহ বনী ইসরাইলের জন্য একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে। আল্লাহ বলেন,
“তোমার পরবর্তীদের জন্য এটি একটি উদাহরণ হবে…” (সূরা ইউনুস; 92)।
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের সদস্যরা বলছেন যে, ফেরাউনের মৃতদেহের বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। ফেরাউনের মৃতদেহ এখনো মিশরের পিরামিডে রয়েছে, এই বক্তব্যের ভিত্তি নেই।
সর্বোচ্চ উলামাদের মতে, ফেরাউনের লাশের বেঁচে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করার মতো প্রমাণ নেই। অতএব, এই বিষয়টি নিয়ে তর্ক করা উচিত নয় এবং আমাদের উচিত আল্লাহর পথে চলা ও আখিরাতে সফল হওয়া।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.