গায়েবি অর্থ অনুপস্থিত। লাশের অনুপস্থিতিতে যে জানাযা পড়া হয় তাকে ‘গায়েবানা জানাযা বলে।
![]() |
গায়েবানা জানাজা কি? শরীয়তের দৃষ্টিকোণ হতে গায়েবানা জানাযা করার আইন কি? ইসলামে গায়েবি জানাজা করার হুকুম |
গায়েবানা জানাযার বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এখানে মূলত তিনটি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে:
1. গায়েবানা জানাযার প্রয়োজনীয়তা:
গায়েবানা জানাযা সেই পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য যেখানে মৃত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়নি, যেমন সমুদ্রে ডুবে যাওয়া বা এমন কোনো কারণে যে তার জানাযা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এই প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে,
যেখানে রাসূল (ﷺ) বাদশাহ নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন, যিনি অমুসলিম দেশে মারা গিয়েছিলেন।
2. মতভিন্নতা:
গায়েবানা জানাযার ব্যাপারে ইসলামী উলামাদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু আলেম মনে করেন, যিনি মারা গেছেন তার জানাযা হয়নি শুধুমাত্র তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা যেতে পারে। তবে যাদের জানাযা হয়ে গেছে তাদের জন্য গায়েবানা জানাযা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়।
3. অবস্থার গুরুত্ব:
যেকোনো ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা আদায়ের ক্ষেত্রে তার মর্যাদা, অবস্থা ও কর্মের গুরুত্ব বিবেচনা করতে হবে। কিছু আলেমের মতে, ধর্মের জন্য বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা আদায় করা যেতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তা বৈধ নয়।
সুতরাং, গায়েবানা জানাযার প্রয়োজনীয়তা এবং শর্তাবলী নিয়ে ইসলামী জ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আলেমগণের মতামত ভিন্ন হতে পারে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে গায়েবানা জানাযা আদায় করা জায়েজ কিনা?
এ বিষয়ে আহলুল ইমামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, গায়েবানা জানাযা সেই পরিস্থিতিতে জায়েজ, যেখানে মৃত ব্যক্তির জানাযা আদায় করা হয়নি বা সে এমন দেশে মারা গেছে যেখানে জানাযা পড়ার কেউ নেই। উদাহরণস্বরূপ,
বাদশাহ নাজাশী অথবা সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যার লাশ পাওয়া যায়নি, এমন পরিস্থিতিতে গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ।
রাসূল (ﷺ) বাদশাহ নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন, যিনি মুসলমান হয়ে মারা গিয়েছিলেন অমুসলিম দেশে। কিন্তু সেখানে তাঁর জানাযা পড়ার মতো কেউ ছিল না।
এখন যদি কোনো ব্যক্তির জানাযা হয়ে থাকে, তবে পুনরায় গায়েবানা জানাযা আদায়ের বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে কোনো দলিল নেই। যদিও কিছু বিখ্যাত আলেম বা মুসলিম শাসকদের জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া বৈধ বলে মতামত দেওয়া হয়েছে, তবে তাদের সমর্থনে বাদশাহ নাজাশী ব্যতীত অন্য কোনো দলিল নেই।
উল্লেখযোগ্য যে, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে দেখা যায় যে, নবী (ﷺ) নাজাশীর মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছিলেন এবং সাহাবিদের নিয়ে জানাযার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একদল আলেম মনে করেন যে, রাসূল (ﷺ) গায়েবানা জানাযা আদায় করেছেন, তবে এটি একমাত্র তাঁর জন্য খাস নয়, বরং বাদশাহ নাজাশীর জানাযার জন্যও একইভাবে গায়েবানা জানাযা পড়া হয়। যদি গায়েবানা জানাযা আদায় করা জায়েজ হতো, তাহলে নবী (ﷺ) নিশ্চয়ই তাঁর সাহাবীদের গায়েবানা জানাযা আদায় করতেন।
এছাড়া, ইসলামিক জ্ঞানীদের মধ্যে কিছু আলেম বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ধর্মের জন্য বিশেষ অবদান রেখে থাকেন, তবে তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে, কোনো ব্যক্তির জানাযা হয়ে গেলে পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েজ নয়।
এ বিষয়ে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, গায়েবানা জানাযা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়, কিন্তু যদি কারো জানাযা না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.