Adds

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস | সালাতে তাশাহুদের বৈঠকে বসার এবং আঙ্গুল নাড়ানোর সঠিক পদ্ধতি কি?

নামাজের বৈঠকে তাশাহুদের সময় আঙুল উঠানোর নিয়ম কি? 


প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবেই যেভাবে তোমরা আমাকে দেখছ। (সহীহ বুখারী, হা/৬৩১)। 

 

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস | সালাতে তাশাহুদের বৈঠকে বসার এবং আঙ্গুল নাড়ানোর সঠিক পদ্ধতি কি? | BongoCyber
নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস | সালাতে তাশাহুদের বৈঠকে বসার এবং আঙ্গুল নাড়ানোর সঠিক পদ্ধতি কি? | BongoCyber 


এই হাদীস সালাত আদায়ের একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করে। উক্ত নীতিমালার আলোকে তাকবীরে তাহরীমা থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সালাতে সর্বাধিক দুটি বৈঠক রয়েছে। প্রথম বৈঠকে বসার শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিকে ‘ইফতিরাশ’ এবং শেষ বৈঠকে বসার শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিকে ‘তাওয়াররুক’ বলা হয়। যেমন মাগরিব, এশা, যোহর ও আসর সালাতের প্রথম তাশাহুদে ‘ইফতিরাশ’ করা এবং শেষ তাশাহুদে ‘তাওয়াররুক’ করা সুন্নত।


ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “ইফিতরাশ বলতে বোঝায়, বাম পাকে বিছিয়ে দিয়ে তার উপর নিতম্ব রেখে বসা, আর ডান পাকে খাড়া করে রাখা।” (কিতাবুল মাজমূঊ, ৩/৪৩৭ পৃষ্ঠা)।


এটি দুই রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে করার বিধান, যাতে একটি-ই তাশাহ্হুদ থাকে, যেমন ফজরের দুই রাকাআতে। (নাসাঈ হা/১১৫৯; মুসলিম হা/৪৯৮; তামামুল মিন্নাহ, পৃষ্ঠা ২২৩)।


অপরদিকে, যেসব সালাতে দুটি বৈঠক রয়েছে, তাদের শেষ বৈঠকে বসার শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘তাওয়াররুক’ বলা হয়। তাওয়াররুক বোঝায়, দ্বিতীয় বা শেষ বৈঠকে বসার সময় ডান পাকে খাড়া রাখা এবং বাম পাকে ডান পায়ের নিচ দিয়ে বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর ভর করে বসা। (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৩৮৮৬)।


এটি জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেকে ফজরের দুই রাকাআতে তাওয়াররুক করে বসে, যা সুন্নাত সম্মত নয়। কারণ তাওয়াররুক হবে তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতের শেষ বৈঠকে।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার সময় বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। তিনি তাশাহুদ পাঠ করার সময় ডান হাতের (তর্জনী ছাড়া) সমস্ত আঙুলগুলোকে বন্ধ করে রাখতেন এবং তর্জনী (শাহাদতের) আঙ্গুল দ্বারা কেবলার দিকে ইশারা করতেন, তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।


তাশাহুদে আঙ্গুল ইশারার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীস থেকে জানা যায়:

1. কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা আঙ্গুল বন্ধ করে তর্জনীকে খাড়া রাখা এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিকে তর্জনীর গোড়ার সাথে লাগিয়ে রাখা।

2. সকল আঙুলকে মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা ইশারা করা।

3. কনিষ্ঠা ও অনামিকা বন্ধ করে তর্জনী খাড়া রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল ও মধ্যমাকে একসাথে করে বৃত্তের মতো করা।

4. ডান হাত ডান রানের উপর রেখে তর্জনী দ্বারা ইশারা করা।


উপরোক্ত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই, প্রত্যেকটি জায়িয। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। ওয়ায়েল ইবনু হূজর (রাঃ) বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ) বাম পা বিছিয়ে দিলেন, বাম হাতকে বাম রানের উপর রাখলেন এবং ডান কনুইকে ডান রানের উপর বিছিয়ে রাখলেন।


আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি তাশাহুদ পড়ার সময় শাহাদাতের দু’ আঙ্গুল তুলে ইশারা করতে লাগলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর।”


তাশাহুদে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা একটি সুপ্রমাণিত সুন্নত। তবে, কিভাবে এবং কখন ইশারা করা হবে, এ বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে:


1. হানাফীরা বলেন, “আশ-হাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার সময় আঙ্গুল তুলতে হবে, এবং “ইল্লাল্লাহ” বলার সময় নামাতে হবে।

2. শাফাঈগণ বলেন, “ইল্লাল্লাহ” বলার সময় ইশারা করতে হবে।

3. মালেকিরা বলেন, সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আঙ্গুল ডানে-বামে ইশারা করতে হবে।

4. হাম্বলী মাযহাবের মতে, আল্লাহর নাম বলার সময় আঙুল দিয়ে ইশারা করতে হবে।


বিগত শতাব্দীর মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “হাদীসে উল্লেখিত বক্তব্যগুলো সবই ব্যক্তি মতামত। তবে, আঙ্গুল উত্থাপন এবং তা নড়ানো সংক্রান্ত যে কোনও ভিত্তি নেই।”


সৌদি সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “তর্জনী আঙ্গুল নড়ানো শুধুমাত্র দু’আর সময় হবে, পূর্ণ তাশাহুদে নয়।”


সুতরাং, তাশাহুদ পড়া থেকে শুরু করে শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে সর্বদা ইশারা করা উচিত এবং দু'আ করার সময় তা নড়ানো উচিত। এ সময় দৃষ্টি থাকবে আঙ্গুলের মাথায়।

Post a Comment

0 Comments