Adds

সালাতুল ইসতিসকা কি? - সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়?

সালাতুল ইসতিসকা কি? - সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়? 
BongoCyber Blog


সালাতুল ইস্তিস্ক্বা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের বিধান কি? উক্ত সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়, আজ সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ 

অনাবৃষ্টিতে মানুষ যখন হাহাকার করে তখন মুসল্লিরা একত্র হয়ে খোলা মাঠে গিয়ে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে মূলত আমরা এটাকেই সালাতুল ইস্তিস্ক্বা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত বলি। 


ভূমিকা:

ইস্তিসক্বা শব্দের অর্থ হলো বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায়, বিশেষ পদ্ধতিতে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পানি প্রার্থনাকে ‘সালাতুল ইস্তিস্ক্বা’ বলা হয়। সালাতুল ইস্তিস্ক্বা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ অনাবৃষ্টির সময় মহান আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে পড়া একটি সুন্নত। এটি ৬ষ্ঠ হিজরীর রমজান মাসে প্রথমবার মদীনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। (মির‘আত ৫/১৭০)


জমিনে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কারণ:

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মানুষের পাপ, বিশেষ করে যাকাত বন্ধ করা। মহানবী (ﷺ) বলেছেন, "হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম রয়েছে, যদি তোমরা এগুলোতে লিপ্ত হও তবে তোমাদের শাস্তি আসবে। যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হয়, তখন তাদের মধ্যে মহামারী ও প্লেগ হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না।"


এছাড়া, যেকোনো জাতি যদি মাপ ও ওজনে কম দেয়, দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকটের শিকার হয়। যেই জাতি যাকাত দেওয়া বন্ধ করে, আল্লাহ তাদের উপর থেকে আকাশের বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। মহানবী (ﷺ) এর কথায় উল্লেখ আছে যে, যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তবে তাদের জন্য বৃষ্টি হত না।


সালাতুল ইস্তিস্ক্বার সময়:

সালাতুল ইস্তিস্ক্বা আদায়ের সঠিক সময় হলো অনাবৃষ্টি, খরা ও দুর্ভিক্ষের সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে সালাত পড়া। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রহ.) বলেছেন, এটি সুন্নাত। রাসূল ﷺ এবং তার সাহাবীদের আমল থেকে এটি প্রমাণিত।


সালাতুল ইস্তিস্ক্বার পদ্ধতি:

সালাতুল ইস্তিস্ক্বা আদায় করতে হলে, মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে বিনয়ের সাথে সূর্যোদয়ের পরে ঈদগাহ ময়দানে যেতে হবে। ইমামের জন্য মিম্বার নিতে হবে এবং আযান ইকামত ছাড়া দুই রাকআত সালাত আদায় করতে হবে।


১. প্রথম পদ্ধতি:

এটি ঈদের নামাজের মতো, প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমার পরে সাতটি অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হবে এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি। প্রতিটি রাকআতে সশব্দে সূরা ফাতিহার পরে যেকোনো সূরা পড়া যায়, তবে প্রথম রাকআতে সূরা ‘আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ‘গাশিয়া’ পড়া উত্তম।


২. দ্বিতীয় পদ্ধতি:

জুমআর খুতবায় ইমাম সাহেব হাত তুলে দুআ করবেন এবং মুক্তাদীরা ‘আমীন’ বলবে।


৩. তৃতীয় পদ্ধতি:

শুরাহবীল বিন সিমত একবার আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি মুযার গোত্রের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।’


৪. চতুর্থ পদ্ধতি:

ইমাম শা’বী বলেন, উমার (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বের হয়ে শুধু ইস্তিগফার করে ফিরে এলেন।


বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ:

(১) اَللَّهُمَّ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ عَلَيْنَا قُوَّةً

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং এটিকে আমাদের জন্য শক্তির কারণ করুন।


(২) اَللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ

অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার বান্দা ও পশুদের পান করান এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন।


সালাতুল ইস্তিস্ক্বা সম্পর্কে জানা জরুরি বিষয়গুলো:

১. সালাতুল ইস্তিস্কার নামাজ দু রাকাত।

২. এর কোন নির্ধারিত সময় বা দিন নেই।

৩. শিশু ও নারীদেরকে সালাতে নিয়ে যাওয়া উত্তম।

৪. জীবিত মুত্তাক্বী ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে।

৫. মৃত ব্যক্তির অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে না।

৬. দুআর সময় হাত যতটা সম্ভব উপরে উঠিয়ে দোয়া করতে হবে।

৭. ঈদের সালাতের মতো তাকবীরের বিধান রয়েছে, তবে অতিরিক্ত তাকবীর না দিলে সমস্যা নেই।

৮. খুতবার উদ্দেশ্য আকুতিভরা দোয়া।

৯. অতিবৃষ্টি হলে উপ কারী বৃষ্টির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments