প্রশ্ন: কোন কোন খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে? যাকাতুল ফিতরের প্রকৃত হকদার কারা? ফিতরা সম্পর্কে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে রাখা ভালো। (পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ)
![]() |
ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম, কোন কোন খাদ্য দিয়ে যাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে? BongoCyber blog |
উত্তর: ইসলামী শরীআতের বিধান গ্রহণ করতে হবে ইসলামের মূল উৎস থেকে। আর শরীয়তের মূল উৎস দু’টি হলো:
(১) মহান আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন। (সূরা আ‘রাফ; ৭/৩)
(২) রাসূল (ﷺ)-এর সহীহ হাদীস। (আবু দাঊদ হা/৪৬০৪)
ফিতরার বিধান:
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, ফিতরা আদায় করতে হবে খাদ্যবস্তু দ্বারা, টাকা-পয়সা দিয়ে নয়। কারণ, রাসূল (ﷺ) ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস রয়েছে, যেখানে কেবল খাদ্যদ্রব্যের উল্লেখ আছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা নেই।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক মুসলিম, ক্রীতদাস ও স্বাধীন ব্যক্তি, নর-নারী, ছোট-বড় সবার উপর যাকাতুল ফিৎর হিসেবে এক ‘সা’ খেজুর কিংবা এক ‘সা’ যব ফরজ করেছেন এবং ঈদের সালাতে যাওয়ার আগে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩-৫; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪)
অন্য একটি বর্ণনায়, আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর যুগে ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। তখন আমাদের প্রধান খাদ্য ছিল: যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর। (সহীহ বুখারী, হা/১৫১০)
এই হাদীসের সারাংশ হলো, যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। রাসূল (ﷺ) ফিতরা হিসেবে এক সা’ খাবার প্রদান করা ফরজ করেছেন এবং সাহাবীগণ তাদের প্রধান খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন।
সৌদি আরবের মহান ফক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, কিছু আলেম খাদ্যদ্রব্য হিসেবে গম হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যখন অন্যরা বলেছেন যে, সেই দেশের প্রধান খাদ্য যা খাওয়া হয় তা হতে পারে গম, ভুট্টা, পার্ল মিলেট ইত্যাদি।
সারসংক্ষেপে, হাদীসের সঠিক অর্থ হলো, নিজ দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে এবং এটি সঠিক মত। ফিতরা দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি প্রকাশ করে। খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত নয় এমন কিছু দিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করা মুসলিমদের জন্য আবশ্যক নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ভাত প্রধান খাদ্য, যা যবের চেয়ে বেশি উত্তম এবং এর মাধ্যমে ফিতরা আদায় করা জায়েজ।
ফিতরার প্রাপক হলো ফকির ও মিসকিন। ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) সাদাক্বাতুল ফিতর ফরজ করেছেন রমযানের সিয়ামকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য। (আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯)
ফিতরার বিষয়াবলী:
১. ফিতরার উপকারিতা:
ঈদের দিনে দরিদ্র ব্যক্তিরা ধনীদের সমতা বোধ করেন।
সিয়ামের ত্রুটিগুলোর কাফফারা হয়।
আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হয়।
গরীবরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
২. ফিতরার পরিমাণ:
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য মাথাপিছু এক "সা" পরিমাণ খাদ্যবস্তু। গড় হিসেবে এটি ৩ কেজির কাছাকাছি হতে পারে।
৩. খাদ্য মিশ্রিত করে ফিতরা:
দুটি বা ততোধিক খাদ্য মিশ্রিত করে ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে দলিলের আলোকে জায়েজ নয়।
৪. আগেভাগে খাদ্য কিনে রাখা:
ইসলামিক সেন্টার খাদ্য কিনে রেখে বিতরণে কোন অসুবিধা নেই।
৫. অর্থ দিয়ে ফিতরা:
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে; অর্থ নয়।
৬. ফিতরা বণ্টনের স্থান:
যেখানে ব্যক্তি অবস্থান করে, সেখানকার দরিদ্রদের মাঝে ফিতরা বিতরণ করতে হবে।
৭. অন্য দেশে ফিতরা প্রেরণ:
অন্য দেশে ফিতরা প্রেরণ করা জায়েজ।
৮. হাদিয়া খাদ্য থেকে ফিতরা:
হাদিয়া হিসেবে পাওয়া খাদ্য থেকে নিজের ও পরিবারের ফিতরা পরিশোধ করা জায়েজ।
৯. ফিতরা আদায়ের সময়:
ঈদের নামাযের পূর্ব পর্যন্ত ফিতরা প্রদান করা যায়।
১০. যিনি ফিতরা আদায় করেননি:
আল্লাহর কাছে তাওবা করা এবং যাকাতের হকদারদের ফিতরা দিতে হবে।
উপসংহার
ফিতরা আদায় করা ইসলামী বিধান অনুসারে জরুরি, যাতে দরিদ্রদের সাহায্য করা যায় এবং সমাজে সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়।
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.