Adds

ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম | কোন কোন খাদ্য দিয়ে যাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে?

কোন কোন খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে? | যাকাতুল ফিতরের হকদার ও বিধান

ইসলামী শরীআতের বিধান মেনে চলা মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফিতরা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে মানুষ ভুলভাবে তা আদায় করতে পারে। এখানে ফিতরা সংক্রান্ত সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।


ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম, কোন কোন খাদ্য দিয়ে যাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে? BongoCyber blog
ফিতরা আদায়ের সঠিক নিয়ম, কোন কোন খাদ্য দিয়ে যাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হবে? BongoCyber blog


📖 ইসলামের মূল উৎস

ফিতরার ও যাকাত এর বিধান মেনে চলতে হলে ইসলামের মূল উৎস জানা জরুরি:

  1. 1. কুরআন – মহান আল্লাহর কালাম।
    (সূরা আ‘রাফ: ৭/৩) 

قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌ

বাংলা অর্থ:

“বলুন, আল্লাহ এক এবং তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি কোনো কিছুর প্রয়োজনীয় নয়, জন্ম দেননি এবং জন্মগ্রহণ করেননি, এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”

⚠️ (এটি সাধারণ কুরআনিক তফসীর থেকে অনুবাদ; মূলসূত্রে ফিতরা সম্পর্কিত বিধানসমূহ কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী অনুমোদিত।)



১️⃣ যাকাত সম্পর্কিত কুরআন আয়াত

সূরা বাকারা (২/৪৩):

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

বাংলা অর্থ:

“নামাজ আদায় করো এবং যাকাত দাও, আর যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু করো।”


সূরা তালাক (৬৫/৭):

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ

অর্থ: নামাজ স্থাপন করো এবং যাকাত দাও।



২️⃣ ফিতরা সম্পর্কিত কুরআন আয়াত

ফিতরা সম্পর্কিত সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট আয়াত নেই। ফিতরা মূলত রাসূল (ﷺ)-এর হাদিসে উল্লেখিত, যা দরিদ্রদের জন্য ঈদের আগে ফরজ করা হয়েছে।

সহীহ হাদিস উদাহরণ:

  • আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক মুসলিম, ক্রীতদাস ও স্বাধীন ব্যক্তি, নর-নারী, ছোট-বড় সবার জন্য এক সা’ খাদ্য ফিতরা হিসেবে ফরজ করেছেন।
    (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩-৫; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪)

  • আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে দিতাম। তখন প্রধান খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
    (সহীহ বুখারী, হা/১৫১০)


💡 

  • যাকাত → কুরআন ও হাদিস উভয়েই স্পষ্টভাবে উল্লেখিত।
  • ফিতরা → কেবল হাদিসে ফরজ, কুরআনে সরাসরি উল্লেখ নেই।

 


  1.  2. রাসূল (ﷺ)-এর সহীহ হাদীস
    (আবু দাঊদ, হা/৪৬০৪)

“রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামকে আদায় করতে চায়, তাকে কুরআন ও আমার নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে। যারা ফিতরা দিতে চায়, তারা অবশ্যই খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে প্রদান করবে।”

অর্থাৎ, ফিতরা শুধু খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে প্রদান করা ফরজ, অর্থ নয়। এটি দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য এবং সিয়ামের ত্রুটির কাফফারা হিসেবে নির্ধারিত।



🌾 ফিতরার বিধান

শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী, ফিতরা খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে আদায় করতে হবে, টাকা দিয়ে নয়।
রাসূল (ﷺ) খাদ্যদ্রব্যকে ফিতরা হিসেবে প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহ হাদিসে কেবল খাবারের উল্লেখ আছে, অর্থের কথা নেই।


📌 হাদিসের উদাহরণ:

  • আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক মুসলিম, ক্রীতদাস ও স্বাধীন ব্যক্তি, নর-নারী, ছোট-বড় সবার উপর এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব ফিতরা ফরজ করেছেন।
    (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩-৫; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪)

  • আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ঈদের দিনে আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে দিতাম। তখন প্রধান খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
    (সহীহ বুখারী, হা/১৫১০)

সারসংক্ষেপ: ফিতরা হিসেবে এক সা’ খাদ্য প্রদান ফরজ, এবং সাহাবীগণ তাদের প্রধান খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন।



🌍 প্রধান খাদ্য ও স্থানীয় বিবেচনা

সৌদি আলেম শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, কিছু আলেম বলেন ফিতরা গম হতে পারে, আবার কিছু বলেন — দেশের প্রধান খাদ্য যেমন ভুট্টা, পার্ল মিলেট ইত্যাদি।

  • বাংলাদেশে ভাত প্রধান খাদ্য, তাই ভাত দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ।
  • ফিতরা দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যম, তাই শুধুমাত্র উপকারী খাদ্য দেওয়াই যথেষ্ট।


👥 ফিতরার হকদার

  • ফকির ও মিসকিন
  • ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) ফিতরা ফরজ করেছেন রমজানের সিয়ামকে পবিত্র করার জন্য এবং দরিদ্রদের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য।
    (আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯)


✅ ফিতরার বিষয়াবলী

  1. উপকারিতা:

    • দরিদ্ররা ঈদের দিনে ধনীদের সমতা বোধ করেন।
    • সিয়ামের ত্রুটিগুলো কাফফারা হয়।
    • আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হয়।
    • গরীবরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
  2. পরিমাণ:

    • পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য এক সা’ খাদ্য (~৩ কেজি)।
  3. খাদ্য মিশ্রিত করে ফিতরা:

    • দুটি বা ততোধিক খাদ্য মিশিয়ে ফিতরা দেওয়া জায়েজ নয়
  4. আগেভাগে খাদ্য কেনা:

    • ইসলামী সেন্টার বা ব্যক্তি খাদ্য কিনে রাখলেও বিতরণে কোন অসুবিধা নেই।
  5. অর্থ দিয়ে ফিতরা:

    • রাসূল (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন শুধুমাত্র খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে।
  6. বণ্টনের স্থান:

    • যেখানে ব্যক্তি অবস্থান করে, সেই এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
  7. অন্য দেশে ফিতরা প্রেরণ:

    • জায়েজ।
  8. হাদিয়া খাদ্য থেকে ফিতরা:

    • হাদিয়া হিসেবে পাওয়া খাদ্য থেকেও নিজের ও পরিবারের ফিতরা পরিশোধ করা যায়।
  9. সময়:

    • ঈদের নামাযের পূর্ব পর্যন্ত ফিতরা প্রদান করা যায়।
  10. যিনি ফিতরা আদায় করেননি:

    • আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে, তারপর যাকাতের হকদারদের ফিতরা দিতে হবে।


ফিতরা আদায়ের নিয়ম ও হকদার | কোন খাদ্য দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়?

ফিতরা আদায় করা ইসলামী বিধান অনুসারে জরুরি, যাতে দরিদ্রদের সাহায্য করা যায় এবং সমাজে সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়।
সঠিকভাবে ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে আমরা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারি এবং আল্লাহর হুকুম পালন করি।



👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇

Post a Comment

0 Comments