Adds

ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি কে? নামাজের ইমামতি করতে যে যোগ্যতা প্রয়োজন

সালাতে ইমাম হওয়ার সর্বাধিক বেশী যোগ্য কে? যে ইমামের কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়; তার পিছনে জেনে-শুনে নিয়মিত সালাত আদায় করা যাবে কি?

সালাতে ইমামতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন সেই যে কুরআনের হাফেয এবং তাজবীদসহ সঠিকভাবে কুরআন পড়তে পারেন। তাজবীদ ছাড়া একজন হাফেয ইমামতি করার যোগ্য নন।


যদি পূর্ণ হাফেয না হন, তবুও যিনি ভালোভাবে পড়তে পারেন এবং যথেষ্ট কুরআন মুখস্থ করেছেন, তিনিই ইমাম হওয়ার অধিক উপযুক্ত।


মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিন ব্যক্তি হলে তাদের মধ্যে একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির অধিক হকদার সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কুরআন পড়তে পারে।” (সহীহ মুসলিম ৬৭৬; মিশকাত ১১১৮)।


রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, “লোকেদের ইমাম হবে সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে ভালো কুরআন পড়তে পারে। যদি সকলেই সমান হয়ে যায়, তবে যে সুন্নাহ জানে সে হবে ইমাম। যদি সুন্নাহর জ্ঞানও সমান হয়, তবে যে আগে হিজরত করেছে সে ইমাম হবে। যদি হিজরতেও সবাই সমান হয়, তবে যে বয়সে বড় সে ইমাম হবে। এবং কেউ যেন অপরের অনুমতি ছাড়াই তার স্থান গ্রহণ না করে।” (সহীহ মুসলিম হা/৬৭৩, আবু দাঊদ হা/৫৮২, তিরমিযী হা/২৩৫, নাসায়ী হা/৭৮০, ইবনু মাজাহ্ হা/৯৮০, সহীহ আল জামি হা/৩১০৪, মিশকাত হা/১১১৭)।


অতএব, যে ব্যক্তি ইমামতি করতে চায়, তার মধ্যে অন্তত তিনটি আবশ্যকীয় যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন:


(১) ইখলাস অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়ত থাকা।

(২) সঠিক কুরআন তিলাওয়াত করা।

(৩) সালাতের মৌলিক বিধি-বিধানগুলো জানা, যাতে সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে।


কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক মত অনুযায়ী, সালাতের মধ্যে বা বাইরে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তাজবীদের কিছু নিয়ম মেনে চলা ওয়াজিব। এসব নিয়ম না মানলে শব্দ ও অর্থের বিকৃতি ঘটতে পারে। তবে যেসব নিয়ম কেবল তিলাওয়াতের সৌন্দর্য বাড়ায়, সেগুলো মেনে না চললেও গুনাহ হবে না, ইনশাআল্লাহ।


যেমন: মাখরাজ অনুযায়ী অক্ষরের সঠিক উচ্চারণ করা আবশ্যক। মাখরাজের ভুল উচ্চারণের ফলে এক অক্ষরের পরিবর্তে অন্য অক্ষর উচ্চারিত হলে অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন:


القلب (আল ক্বালবু) অর্থ: হৃদয়, অন্তর।

الكلب (আল কালবু) অর্থ: কুকুর।


এখানে ق (ক্বাফ) এর স্থানে ك (কাফ) উচ্চারণের ফলে অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে।


এছাড়া ه এবং ح উভয়ের বাংলা উচ্চারণে একরকম হলেও আরবীতে তাদের উচ্চারণের স্থল ভিন্ন। এর ফলে অর্থের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। যেমন সূরা ফাতেহার প্রথম আয়াতে, আমরা বলি اَلْحَمْدُ لله (আলহামদু লিল্লাহ) অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কিন্তু যদি বলা হয় اَلْهمْدُ لله (আলহামদুলিল্লাহ) অর্থ: সমস্ত নিভে যাওয়া আল্লাহর জন্য। এখানে ح (হাঁ) এর জায়গায় ه (হা) উচ্চারণের কারণে অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে।


এছাড়া, মদ্দে ত্ববাঈ (এক আলিফ টেনে পড়া) অনেক সময় জরুরি। অন্যথা শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন:

يعف "তিনি মার্জনা করেন"

يعفوا "তারা মার্জনা করেন"


এখানে মাদ্দে ত্ববাঈর ফলে একবচন বহু বচনে পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবে ইজহার, ইকলাব, ইদগাম, ইখফা, গুন্নাহ এবং মাদ্দে ত্ববাঈ ছাড়া অন্যান্য মাদ্দ যেমন: মাদ্দে মুত্তাসিল, মুনফাসিল, লাজিম, আরেযী, লীন, বদল ইত্যাদি এবং অক্ষরের সিফাত (উচ্চারণের ক্ষেত্রে মোটা-চিকন, কলকলা ইত্যাদি) কেবল তিলাওয়াতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে; এগুলোর ব্যতিক্রম ঘটলেও অর্থ পরিবর্তন হয় না।


সালাতে ইমামতির সময়, বিশেষ করে সূরা ফাতিহা পাঠের ক্ষেত্রে, যদি ইমামের উচ্চারণে ভুলের কারণে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে এবং তার পিছনে সালাত আদায় করাও জায়েজ হবে না।


অবশ্য অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী ইমামের পিছনে শুদ্ধ তিলাওয়াতকারী ব্যক্তির সালাত হবে না। কারণ, দলিল ও জমহুর ওলামাদের মতে, সূরা ফাতিহা পড়া সালাতের একটি রোকন। এর ছাড়া সালাত শুদ্ধ হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না, তার সালাত হয় না।” (সহীহ বুখারী হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ৯০৬, ৯০৭; মিশকাত, হা/৮২২ ও ৮২৩)।


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন সালাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।” তিনি এই কথাটি তিনবার বলেছেন। তখন আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি?” উত্তরে তিনি বললেন, “তুমি চুপে চুপে পড়।” (সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪; মিশকাত, হা/৮২৩)।


ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “প্রত্যেক সালাতে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ের জন্য ক্বিরা‘আত (সূরা ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফর অবস্থায় হোক, জেহরী সালাতে হোক বা সের্রী সালাতে হোক।” (সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬)।


যদি ভুলের বিষয়টি সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য কোন সূরাতে ঘটে, তবে সালাত ত্রুটিপূর্ণ হলেও, তাদের সালাত হয়ে যাবে। কিন্তু যে ইমাম সঠিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে না, এমন ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য নিয়োগ করা জায়েজ নয়।


পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আমরা জানি, ইমাম অর্থ নেতা। সালাত আদায় করতে তিনি নেতৃত্ব দেন। সকল শ্রেণীর মুসল্লী তার নেতৃত্বে সালাতে রুকু-সিজদা দেন, ওঠেন ও বসেন। তার তাকবীর ধ্বনি শুনে সকলে তাকে অনুসরণ করেন। ইমামের এ অনুসরণই হলো ইকতিদা। এজন্য ইমাম সাহেবকে হতে হবে সর্বপ্রথম সুন্দর চরিত্রের অধিকারী এবং বিশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী। সুতরাং গ্রাম কিংবা শহরের যে সকল মসজিদে অশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ইমাম রাখা হয়, সেসব মসজিদের দায়িত্বশীলদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা উচিত। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।

Post a Comment

0 Comments