Adds

লাইলাতুল কদরের রাত কোনটি? লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় কী

প্রশ্ন: লাইলাতুল ক্বদরের রাত কোনটি? প্রত্যেক বছর লাইলাতুল ক্বদর কি এক রাতেই হয়ে থাকে, না কি এটা স্থানান্তরিত হয়? লাইলাতুল ক্বদর গোপন রাখার হিকমত কি? ক্বদরের রাতটি চিহ্নিত করার কোনো আলামত আছে কি?  

লাইলাতুল কদরের রাত কোনটি? লাইলাতুল কদরের রাত চেনার উপায় কী BongoCyber Blog

রমজান মাস হলো বছরে ১২ মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস, যা রহমতের মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে আল্লাহর রহমত লাভ করাই সত্যিকারের সৌভাগ্য, আর যারা এর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়, তারা চরম হতভাগ্য। ইমাম ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেছেন, “বছরের বারোটি মাস যেন নবী ইয়াকুব (আ.)-এর বারো জন পুত্রের মতো। তাদের মধ্যে ইউসুফ (আ.) তাঁর পিতার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন, তেমনি রমজান মাসও আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।” আল্লাহ তা'আলা যেভাবে ইউসুফ (আ.)-এর দু'আয় তাঁর অন্য ১১ ভাইকে ক্ষমা করেছিলেন, ঠিক তেমনি রমজান মাসে আপনার দু'আর মাধ্যমে আল্লাহ আপনার বাকি মাসগুলোর পাপগুলোও ক্ষমা করতে পারেন। প্রিয় পাঠক, সত্যিই রমজান মাস একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ দয়া ও নিয়ামত। বিশেষ করে, এই মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।


লাইলাতুল কদর কোন রাত্রিতে?

প্রথমত, লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কুরআনে সঠিকভাবে কোন রাতে এটি রয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ হাদীস ও প্রসিদ্ধ আলেমদের মতে, এটি রমজানের শেষ দশকের যে কোন একটি রাতে হয়ে থাকে। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকেই নিহিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম দশকে এবং মাঝের দশকে ইতিকাফ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কাছে বলা হয়েছিল যে, এই রাতটি শেষ দশকে নিহিত। তিনি (ﷺ) এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, তিনি কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সিজদা করছেন। সেটি ছিল রমজানের ২১ তারিখে। সেই রাতে বৃষ্টি হয়েছিল, ফলে মসজিদের ছাদে পানি পড়ে গিয়েছিল। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন, “আমি স্বচক্ষে দেখেছি, রাসূল (ﷺ) কাদা ও পানিতে সিজদা করছেন।” (সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭)। রমজানের শেষ দশকের কোন রাতে লাইলাতুল কদর তা নির্ধারণের জন্য প্রায় ৪০টি বক্তব্য পাওয়া যায়। আমরা হাদীস এবং ইতিহাসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করবো।


লাইলাতুল কদরের বিভিন্ন মতামত:

প্রখ্যাত হাদিস বিশেষজ্ঞ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি (রাহ.) তাঁর "ফাতহুল বারি" নামক গ্রন্থে লাইলাতুল কদরের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। যেমন:


২১তম রাত: ইমাম শাফি (রহ.) ২১তম রাতকে লাইলাতুল কদর মনে করতেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, “রাসূল (ﷺ) আমাদের বলেছিলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ দশকের বেজোড় রাতে খোঁজ করো।’ আমি দেখেছি, রাসূল (ﷺ) কাদা-পানিতে সিজদা করছেন।” (বুখারী, আস-সহিহ: ১৮৮৯)।


শেষ সাত রাতে: কিছু আলেম মনে করেন, এটি শেষ সাত রাতের কোন এক রাতে। ইবনু উমার (রা.) বলেন, “রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত খোঁজ করো।’” (মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৩৬)।


২৩তম রাত: আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস (রা.) ২৩তম রাতকে লাইলাতুল কদর মনে করতেন। তিনি বলেন, “রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তুমি রমজানের ২৩ তম রাতে আসবে।’” (আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৮০; হাদিসটি হাসান)।


২৪তম রাত: তাবি’ঈ ইকরামা (রহ.) বলেছেন, “তোমরা ২৪ তম রাতে লাইলাতুল কদর খোঁজ করো।” (বুখারী, আস-সহিহ: ২০২১)।


২৭তম রাত: অনেক আলেম বলেন, এটি রমজানের ২৭তম রাতে। উবাই ইবনু কা’ব (রা.) কসম করে বলতেন, ২৭তম রাতটি লাইলাতুল কদর। (মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬২)।


শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর খোঁজ করো।” (সাহীহ বুখারী: ২০১৭)।


লাইলাতুল কদর চিহ্নিত করার উপায়:

লাইলাতুল কদরের কিছু আলামত রয়েছে যা রাতের মধ্যে এবং পরদিন সকালে দেখা যায়:


রাতটি আলোকোজ্জ্বল: ওয়াসিলা ইবনু আসক্বা (রা.) বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, “কদরের রাতটি আলোকোজ্জ্বল হবে।” (আলবানি, সহিহুল জামি: ৫৪৭২)।


আবহাওয়া: জাবির (রা.) বলেন, “এই রাতটি গরম ও ঠাণ্ডা উভয়ই হবে না।” (ইবনু খুযাইমাহ, আস-সহিহ: ২১৯০)।


স্বস্তি ও প্রশান্তি: এই রাতে মুমিনদের হৃদয়ে স্বস্তি ও প্রশান্তি অনুভূত হয়।


চাঁদের আকার: আবু হুরায়রাহ্ (রা.) বলেন, “চাঁদ হবে থালার মতো।” (মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৬৯)।


এই আলামতগুলো লক্ষ্য করে মুমিনেরা লাইলাতুল কদর চিহ্নিত করতে পারেন এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments