হাদীস (Hadith) কি? সংজ্ঞা, শ্রেণীবিভাগ ও ইসলামী শরীয়াতে গুরুত্ব 🕌
হাদীস (حَدِيْث) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো — নতুন, পূর্বে অজানা বা নবীন কিছু। যা পূর্বে ছিল না, এখন তা উদ্ভাবিত বা প্রকাশিত হয়েছে, তাকে হাদীস বলা হয়।
হাদীসের সংজ্ঞা 📝
হাদীসের আরেকটি অর্থ হলো — কথা, বাণী, সংবাদ, বিষয় বা অভিনব কাজ।
ফক্বীহগণ অনুসারে, নবী করীম ﷺ যে সব কথা বলেছেন, কাজ করেছেন বা অনুমোদন/সমর্থন করেছেন, তা হাদীস।
সাহাবাদের কথাবার্তা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস বলা হয়।
ইমাম নববী বলেন:
“যদি সাহাবীদের কথা বা কাজের বর্ণনা বর্ণনাকারীদের দ্বারা ধারাবাহিকভাবে পৌঁছায়, তবে তা ‘মাওকুফ হাদীস’ হিসাবে গণ্য হবে। পরবর্তীতে, এ ধরনের বর্ণনাকে ‘আসার’ এবং হাদীসে ‘মাওকুফ’ বলা হয়।”
হাদীসের প্রকারভেদ ✨
১️⃣ কাজ এবং বাণী অনুসারে:
- কাওলী হাদীস: রাসূল ﷺ এর মুখের বাণী।
- ফিলী হাদীস: রাসূল ﷺ যে কাজ করেছেন এবং সাহাবীরা তা বর্ণনা করেছেন।
- তাকরীরী হাদীস: সাহাবীদের কাজ বা কথার প্রতি রাসূল ﷺ যে সমর্থন দিয়েছেন।
২️⃣ রাবীদের সংখ্যা অনুসারে:
- খবরে মুতাওয়াতির: এত সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন, মিথ্যা হওয়া সম্ভব নয়।
- খবরে মাশহুর: প্রতি যুগে অন্তত তিনজন রাবী বর্ণনা করেছেন।
- খবরে ওয়াহেদ / খবরে আহাদ: গরীব বা মাশহুর হাদীসকে একত্রে আহাদ বলা হয়।
৩️⃣ রাবীর সিলসিলা অনুসারে:
- মারফু হাদীস: সনদ রাসূল ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
- মাওকুফ হাদীস: সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে।
- মাকতু হাদীস: সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌঁছেছে।
৪️⃣ রাবী বাদ পড়ার দিক থেকে:
- মুত্তাসিল হাদীস: সনদের ধারাবাহিকতা পুরোপুরি অক্ষুণ্ণ।
- মুনকাতে হাদীস: সনদের মধ্যে কোনো রাবীর নাম বাদ পড়েছে।
মুনকাতে হাদীসের তিন প্রকার:
- মুরসাল হাদীস: সাহাবীর নাম বাদ।
- মুয়াল্লাক হাদীস: প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ।
- মুদাল হাদীস: দুই বা তার বেশি রাবী ক্রমান্বয়ে বাদ।
৫️⃣ বিশ্বস্ততা অনুসারে:
- সহীহ হাদীস: বর্ণনাকারীর নাম, বিশ্বস্ততা ও স্মৃতিশক্তি প্রখর।
- হাসান হাদীস: সহীহের মতো, তবে কিছু দুর্বলতা থাকতে পারে।
- যয়ীফ হাদীস: সহীহ বা হাসানের গুণাবলী অনুপস্থিত।
এছাড়া কুদসী হাদীস হলো আল্লাহর সরাসরি ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে নবী ﷺ-কে জানানো বার্তা, যা নবী ﷺ নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
সহীহ ও হাসান হাদীসের শর্তাবলী ✅
সহীহ হাদীসের জন্য ৫টি শর্ত থাকা আবশ্যক:
- সনদ মুত্তাসিল।
- শায নয়।
- মু‘আল না হওয়া।
- রাবি আদিল।
- রাবি দ্বাবিত।
হাসান হাদীস-এর শর্ত একই, তবে রাবির দ্বাবিত কিছুটা দুর্বল হতে পারে।
যয়ীফ হাদীস: হাসান হাদীসের শর্তের কোনটি অনুপস্থিত থাকলে।
পর্যায়: কিছুটা দুর্বল → অত্যন্ত দুর্বল → মাউযূ বা বানোয়াট।
গুরুত্বপূর্ণ: যয়ীফ হাদীস কখনোই আমলযোগ্য নয়।
হাদীস কি শরীয়তের উৎস? 📖
মুসলিম উম্মাহ একমত যে নবী ﷺ-এর কথা, কর্ম ও সম্মতি ইসলামী শরী‘আতের মৌলিক উৎস।
শরী‘আতের প্রধান দুটি উৎস:
- পবিত্র কুরআন
- নবী ﷺ এর সহীহ হাদীস
হাদীসের প্রতি আমল না করে কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারে না। তাই প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হাদীস মেনে চলা অপরিহার্য।
হাদীস ছাড়াই শরী‘আতের বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে পালন সম্ভব নয়।
🌟
- হাদীস হলো নবী ﷺ-এর বাণী, কাজ ও অনুমোদনের বিবরণ।
- শ্রেণীবিভাগ: কাওলী, ফিলী, তাকরীরী।
- সনদ ও রাবীর ধরন অনুযায়ী: মারফু, মাওকুফ, মাকতু, মুত্তাসিল, মুনকাতে ইত্যাদি।
- বিশ্বস্ততা অনুযায়ী: সহীহ, হাসান, যয়ীফ।
- হাদীসই কুরআনের পর শরী‘আতের মূল উৎস।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇

0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.