Adds

নবীদের কাহিনী - ইসরা ও মিরাজ শব্দের অর্থ কি? মিরাজ থেকে শিক্ষা এবং প্রাপ্তি কি?

 Nobider Kahini - BongoCyber

প্রশ্ন: ইসরা ও মি‘রাজ শব্দের অর্থ কি? মি'রাজ কখন সংঘটিত হয়েছে? রজব মাসে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত আছে কি? মি‘রাজ থেকে শিক্ষা এবং প্রাপ্তি কি? দুই পর্বের আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব পূর্বের পর্বটি কমেন্টে দেখুন।


রাসূল (ﷺ)-এর মি'রাজ: স্বশরীরে নাকি স্বপ্নে?

রাসূল (ﷺ)-এর মি'রাজ সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, তবে অধিকাংশ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এই ঘটনা জাগ্রত অবস্থায়, স্বশরীরে সংঘটিত হয়েছিল। ইমাম ইবনে কাসীর ও কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, যদিও কেউ কেউ বলেছেন, এটি স্বপ্নযোগে হয়েছিল, তবে অধিকাংশ আলেম, ফকীহ এবং মুহাদ্দিসের মতে, মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়। বিভিন্ন নিদর্শন এবং প্রমাণাদিও এ মতকে সমর্থন করে (ইবনে কাসীর মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা/৫৮৬৩)।


ইসরা-মি'রাজের কুরআনিক প্রমাণ:

মহান আল্লাহ ইসরা-মি'রাজের ঘটনার প্রসঙ্গে কুরআনে বলেন:

> “পবিত্র তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের একাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত, যেখানকার চারপাশ আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা ইসরা, ১৭:১)

এই আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে:

1. ঘটনার স্বল্প সময়: শব্দ ليلاً দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে যে, এই ঘটনাটি রাতে, অতি স্বল্প সময়ে সংঘটিত হয়েছিল।

2. স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়: بِعَبْدِهِ শব্দ ব্যবহার করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ)-এর দেহ ও আত্মা উভয়ই এই ঘটনায় অংশগ্রহণ করেছিল।

3. দাসত্বের মর্যাদা: আয়াতে রাসূল (ﷺ)-কে ‘আব্দ’ বা আল্লাহর দাস বলে অভিহিত করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ সম্মান নির্দেশ করে।


মি'রাজের প্রধান লক্ষ্য:

আল্লাহ ইসরা-মি'রাজের মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় রাসূলকে কিছু বিশেষ নিদর্শন দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। হাদীসে এই নিদর্শনসমূহের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যেমন:

বক্ষ বিদারণ

বায়তুল মুক্বাদ্দাসে গিয়ে সালাত আদায়

সাত আসমান অতিক্রম করে বিভিন্ন নবীর সাথে সাক্ষাৎ

জান্নাত, জাহান্নাম ও সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছানো

আল্লাহর সাথে কথোপকথন এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান লাভ


মি'রাজের তারিখ ও সময়:

মি'রাজের সঠিক দিন-তারিখ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো দলিল নেই। বিভিন্ন আলেমের মধ্যে এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে:

1. কেউ বলেছেন, এটি নবুওয়তের আগে হয়েছিল।

2. অধিকাংশ মত অনুসারে, মি'রাজ নবুওয়তের পরে সংঘটিত হয়েছে। তবে নবুওয়তের কত বছর পরে, সে বিষয়ে ১০টিরও বেশি মত রয়েছে (ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুলবারী)।

3. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেছেন, মি'রাজের নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই।

4. মি'রাজ ২৭ রজবে সংঘটিত হয়েছে বলে যেসব মত প্রচলিত, তার কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই (ইবনে কাসীর, আল-বিদায়া; ইবনে রজব হাম্বলী, লাতায়িফুল মাআরিফ)।


রজব মাসে বিশেষ ইবাদতের বিধান:

শরীয়তের দৃষ্টিতে রজব মাসে বিশেষ কোনো ইবাদত পালন করার বিধান নেই। রাসূল (ﷺ) বা সাহাবীগণ রজব মাসে বা মি'রাজের রাতে কোনো বিশেষ ইবাদত করেননি। তাই এই রাতে বিশেষ ইবাদত করা বা কোনো অনুষ্ঠান পালন করা বিদ‘আত হিসেবে গণ্য।


মি'রাজের শিক্ষা ও উদ্দেশ্য:

মি'রাজের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে তিনটি বিষয় পেয়েছিলেন

1. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান

2. সূরা বাক্বারাহর শেষ আয়াতসমূহ

3. উম্মতের মধ্যে যারা শিরক করবে না, তাদের জন্য ক্ষমার প্রতিশ্রুতি


মি'রাজের মূল শিক্ষা হলো আল্লাহর প্রতি দাসত্ব এবং সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা। আল্লাহর নিকট দাসত্বই সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক।


উপসংহার:

মি'রাজের ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। এটি আল্লাহর প্রতি দাসত্ব, সালাতের গুরুত্ব এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার এক মহামূল্য শিক্ষা। আল্লাহ আমাদেরকে মি'রাজের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন—আমীন

Post a Comment

0 Comments