Adds

স্ত্রী কি তার স্বামীর আনুগত্য করতে বাধ্য? Life of Islam - BongoCyber Blog Post

স্ত্রী কি তার স্বামীর আনুগত্য করতে বাধ্য? 


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাঁকে জাহান্নাম দেখানো হয়। তিনি দেখতে পান সেখানকার অধিকাংশ অধিবাসী হলো নারী। কারণ, তারা কুফরী করে।


সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরি করে?


নবিজী বললেন, না, ❝তারা স্বামীর অবাধ্য এবং অকৃতজ্ঞ হয়।❞ - [সহীহ বুখারী: ২৯]।


এখানে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি এলার্মিং হাদীস বলেন, জাহান্নামীদের অধিকাংশ নারী এবং এটার কারণ কুফরি

স্বাভাবিকভাবেই সাহাবীরা আল্লাহর সাথে কুফরিকে মনে করেন। তবে শাব্দিক অর্থে কুফরি শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে কুফরি না-ও হতে পারে। নবিজী বিষয়টি ক্লিয়ার করে বলেন- ❝স্বামীর অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা।❞ 


দ্বিতীয় বিষয় হলো, ❝পাপ❞। এখানে নারীদের দুটো পাপের কথা বলা হয়েছে, যে কারণে তাদের স্রেফ গুনাহই হচ্ছে না, তাদের জাহান্নামে যাবার কারণ। ❝স্বামীর অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা।❞


অবাধ্যতার বিপরীত বাধ্যতা, আনুগত্য। তারমানে, স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করবে, স্বামীর কথা মানবে, এটা অপশনাল না বরং, ❝আবশ্যক।❞


স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে, এটা কি কুরআনে আছে? 

অবশ্যই আছে। 

আল্লাহ বলেন:

❝পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত। তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিণী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।❞ -  [সূরা আন-নিসা ৪:৩৪]


স্ত্রী যদি স্বামীর আনুগত্য না মানে, স্বামীর অবাধ্য হয়, তাহলে স্বামী স্ত্রীকে বুঝাবে, স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা থাকবে। এগুলো ধারাবাহিকভাবে করবে। এরপরও যদি স্ত্রী আনুগত্য না করে, তাহলে স্বামী তাকে মৃদু প্রহার করতে পারে।


এই যে স্বামী স্ত্রীকে শাস্তি দেবার অধিকার আছে, এটা অথোরিটির বিষয়। স্বামীকে আল্লাহ এমন অথোরিটি চর্চার সুযোগ দিয়েছেন। 


আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদাহর অনুমতি নেই। সিজদাহ পাবার একমাত্র হকদার হলেন আল্লাহ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক্ষেত্রে একটি মেটাফোর ব্যবহার করেন। তিনি বলেন:


❝আমি যদি কোনো মানুষকে সিজদাহ করার অনুমতি দিতাম, তবে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম স্বামীদেরকে সিজদাহ করার। কেননা, আল্লাহ স্ত্রীদের ওপর স্বামীদের অধিকার দিয়েছেন।❞ - [সুনানে আবু দাউদ: ২১৪০, জামে আত-তিরমিজি: ১১৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৫২]।


এই হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ ❝হাসান❞, ❝সহীহ❞ হিশেবে আখ্যায়িত করেন। 


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীকে স্বামীর সিজদাহ করার নির্দেশ দেননি, কিন্তু স্ত্রীর কাছে স্বামী কেমন এটা বুঝার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী উদাহরণ দিয়েছেন। কাউকে সিজদাহ দেয়া মানে তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা। আর এটা তখনই সম্ভব, যখম একজন থেকে আরেকজন শ্রেষ্ঠ হবে। সমানে-সমানে সিজদাহর মতো এমন উদাহরণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিতেন না। 


ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা, কর্তৃত্বকে কখনো 'সমান' বলে উল্লেখ করেনি; বরং স্বামীকে, পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে।


আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:

❝নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।❞ - [সূরা বাকারা ২:২২৮]।


নারী-পুরুষ কি সবকিছুতে সমান? না। ইসলামে নারী-পুরুষ সবকিছুতেই সমান নয়, সবকিছুতে তাদের সমান অধিকার নেই। ধর্মীয় বিধান মেনে চলার জন্য, সওয়াবের বেলায়, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে নারী-পুরুষ তার এফোর্ট অনুযায়ী সওয়াব পাবে। পুরুষ নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব, নারী নামাজ পড়লে কম সওয়াব এমন না। আবার ইসলাম তাদেরকে একই দায়িত্ব দেয়নি। দুজনের ভূমিকা ভিন্ন। 


ইবাদাতের ক্ষেত্রে নারী ❝নারী❞ হবার কারণে অনেক ইবাদাত সক্রিয়ভাবে করতে পারে না। 


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা মদীনার নারীদের পক্ষে তাঁর কাছে জানতে গেলেন- তারা (স্ত্রীরা) তো স্বামীর ❝চাহিদা❞ পূরণ করে, সন্তান লালন পালন করে, গৃহস্থালি দেখাশোনা করে। অন্যদিকে, স্বামীরা জুমুআর নামাজে যায়, অসুস্থকে দেখতে যায়, জানাজার নামাজ পড়তে যায়, হজ্জ-উমরা করতে যায়, যুদ্ধে যেতে পারে। নারীদের তো সেই সুযোগ নাই। তারা তো পিছিয়ে গেলো। তারা কিভাবে সেইসব সওয়াব অর্জন করতে পারে, যা নারী হবার কারণে তারা বঞ্চিত? 


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই নারী সাহাবীর প্রশ্ন শুনে এতো খুশি হলেন যে, তিনি বাকি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, দ্বীনের ব্যাপারে এই নারীর মতো বুদ্ধিদীপ্ত কোনো প্রশ্ন কি তোমরা এর আগে কখনো শুনেছো?


সাহাবীরা জবাব দিলেন, তারা কখনো শুনেননি। 


অতঃপর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আতিকা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, অন্যান্য নারীদেরকে জানিয়ে দিতে- স্ত্রী যদি তার স্বামীর সাথে ভালো আচরণ করে, তাকে সহযোগিতা করে, তাকে মান্য করে, তাহলে সে সমান সওয়াব পাবে (স্বামী বাইরে গিয়ে যেসব সওয়াব কামায়)। 


একজন নারী সাহাবী গেলেন আল্লাহর ইবাদাত করে (হজ্জ-উমরা, জানাজা, যুদ্ধ) করে সওয়াব অর্জনের প্রশ্ন নিয়ে, আর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য সেসব বিধান শীতিল করে সেগুলো করতে না বলে কী বললেন? স্বামীর খেদমত। স্বামীর খেদমত করলে নারীরা তেমন সওয়াব পাবে।


আতিকা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা যখন উত্তর শুনলেন, তখন আনন্দচিত্তে তাকবীর দিতে দিতে নারীদের কাছে যান সুসংবাদ দিতে। - [ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান: ৮৩৬৯, মুসান্নাফ ইবনে আব্দির রাজ্জাক: ১৫৯১৪]।


আনুগত্য ❝দুই❞ ধরনের হতে পারে। যথাঃ এক. ❝শর্তহীন আনুগত্য❞ এবং দুই. ❝শর্তযুক্ত আনুগত্য❞। শর্তহীন আনুগত্য লাভের অধিকারী আল্লাহ ও তাঁর রাসূল। বাকি সবার প্রতি আনুগত্য শর্তযুক্ত। আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশের সাথে কনফ্লিক্ট হয়, এমন কারো আনুগত্য করা যাবে না বলে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেন। -  [সহীহ বুখারী: ৬৮৩০]। 


নফল রোজা দেখবেন সবচেয়ে বেশি রাখে নারীরা। একজন পুরুষ যদি নফল রোজা রাখতে চায়, স্ত্রীর অনুমতি নেয়া লাগে না। কিন্তু, একজন নারী যদি নফল রোজা রাখতে চায়, স্বামীর অনুমতি লাগবে। - [সহীহ বুখারী: ৫১৯২]।


একটি নফল আমল করার সময়ও নারীকে স্বামীর অনুমতি নিতে হচ্ছে, সে চাইলে এখানে তর্ক করতে পারবে না ❝আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখবো, তুমি না করবে কেনো?❞ অনুমতির ব্যাপারটি শার'ঈ স্বীকৃত। 


বিয়ের পর একজন নারীর কাছে যদি স্বামী-বাবা দুইদিক থেকে আনুগত্যের কনফ্লিক্ট হয়, তাহলে সে কার আনুগত্য করবে? 


শায়খ আসিম আল হাকিমের মতে, এই বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই যে, ❝স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করবে।❞ 


ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহর কাছে একটি কেইস যায়৷ একজন নারীর মা অসুস্থ। এখন সে যদি তার মায়ের সেবা করতে যায় তবুও কি স্বামীর অনুমতি নিতে হবে? 


ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, হ্যাঁ, তবুও অনুমতি নিতে হবে। স্বামী অনুমতি দিলে তবেই যাবে। [শারহু মুনতাহা আল-ইরাদাত ৩/৪৭]


স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে এটা স্বীকৃত বিষয়। লেখাটি শুরু করেছিলাম জাহান্নামীদের মধ্যে অধিকাংশ নারী হবার কারণ স্বামীর অবাধ্যতা। এই অংশ শেষ করবো, নারীদের জান্নাত লাভের একটি উপায় হলো স্বামীর আনুগত্য। 


নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের চারটি আমলের কথা বলেছেন। এগুলো তারা যথাযথভাবে করলে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে তারা প্রবেশ করতে পারবে।


আমলগুলো হলোঃ

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

২. রমজান মাসের রোজা

৩. সতীত্ব রক্ষা এবং

৪. স্বামীর আনুগত্য। - [সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪২৫২]। 


দাম্পত্য জীবনের ভিত্তিমূল কী? উপরে যা বললাম সেগুলো ❝‘ল' এন্ড অর্ডার❞। দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ❝‘ল' এন্ড অর্ডার❞; তবে এটা দাম্পত্য জীবনের ভিত্তিমূল না।


পবিত্র কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রাণশক্তি বলা হয়েছে ❝মাওদ্দাহ ওয়ারাহমাহ❞ - ❝ভালোবাসা ও দয়া❞। এই দুটো আল্লাহ নিজেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বর্ষণ করেন। BongoCyber Blog Post

👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇

Post a Comment

0 Comments