প্রশ্ন: সন্তানের উপর তার পিতা-মাতা অযথা যুলুম করে। সে জন্য সন্তান পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাচ্ছে। এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
উত্তর:
1️⃣ প্রথমতঃ সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব 🎯 অত্যন্ত কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদী ⏳। আল্লাহ ﷻ পিতা-মাতা ও সন্তান উভয়কে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব 🛠 প্রদান করেছেন। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা ফরজ। এর ব্যত্যয় ঘটলে আখিরাতে উভয়কেই বিচারের কাঠগড়ায় ⚖️ দাঁড়াতে হতে পারে।
2️⃣ মাতৃগর্ভে সন্তানের সঞ্চারণ থেকে শুরু করে বড় হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত 🧒, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব অব্যাহত থাকে। শরীয়তসম্মত প্রয়োজন মেটাতে পিতা-মাতা যদি উদাসীন হন, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে ❗।
3️⃣ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, "তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" (সহীহ বুখারী, হা/৮৯৩; সহীহ মুসলিম হা/৪৮২৮; তিরমিজি হা/১৭০৫) 📜।
4️⃣ মহান আল্লাহ ﷻ নিজের এবং বান্দার উপর যুলুম হারাম করেছেন 🚫। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, "হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি, তাই তোমাদের মধ্যেও যুলুম করা হারাম করলাম।" (সহীহ মুসলিম হা/২৫৭৭) 🛡️।
5️⃣ বিদায় হজে রাসূল ﷺ বলেছেন, "তোমাদের জীবন, সম্পদ, এবং ইজ্জত 🏅 একে অপরের জন্য পবিত্র।" সাবধান! কোন অপরাধকারী যেন তার নিজের জীবনের উপর বা সন্তানের উপর যুলুম না করে। শয়তান ⚠️ চিরতরে নিরাশ যে এ শহরে তার পূজা হবে না, তবে তুচ্ছ কাজের মাধ্যমে সে খুশি হবে। (তিরমিজি ২১৫৯) 🔥।
6️⃣ যদি পিতা-মাতা বিনা কারণে সন্তানের উপর যুলুম করেন, সন্তানের উচিত পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা 🕊️ এবং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নসিহত করা 📖। যদি উপদেশ গ্রহণ না করেন, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি ঘরে থাকা সন্তানের জন্য উত্তম হয় 🏡, তবে ঘরেই থাকবে। আর গৃহত্যাগ করা নিরাপদ হলে 🏃, গৃহত্যাগ করবে।
📜 মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ তৈরি করে দেবেন।’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব: ২)।
📖 অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব: ৪)।
🏡 তবে প্রয়োজনে সন্তান গৃহত্যাগ করলেও, পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। কেননা দুনিয়াতে পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা অপরিহার্য। যে কোনো মূল্যে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। (📚 ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৫/২৭৬-২৭৭, ২৬/৩১১-৩১৫)।
🚫 তাছাড়া, রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯২২)।
🤝 ইসলামের নির্দেশনা হলো: সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার হক আদায় করা জরুরি। এমনকি পিতা-মাতা কাফের হলেও তাদের সম্মান করতে হবে, যদি না তারা শিরক বা অন্যায়ের আদেশ দেন। (সূরা আনকাবুত: ৮)।
💡 তারা যত কষ্টই দিক না কেন, তা ছোট করে দেখতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সাধ্যমতো বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই তাদের পরিত্যাগ করা যাবে না। কারণ, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত।’ (ইমাম বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০)।
🚪 রাসূল ﷺ বলেন, ‘পিতা হলেন জান্নাতের মধ্যম দরজা। তুমি ইচ্ছা করলে তাকে হেফাযত কর, ইচ্ছা করলে পরিত্যাগ কর।’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত হা/৪৯২৮, সিলসিলা সহীহাহ হা/৯১৪)।
📢 রাসূল ﷺ আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক!’ তিনি তিনবার একথা বলেন। (সহীহ মুসলিম হা/২৫৫১, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৪৯১২)।
📜 বিগত শতাব্দীতে সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
✍️ “শরীয়তসম্মত কারণে পিতা-মাতা থেকে পৃথক হওয়া দোষণীয় নয়। তবে এর মানে এই নয় যে, পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে। বরং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা অপরিহার্য। যেমন: তাদের খাদ্য, পানাহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য খরচ বহন করা। এমনকি যদি পিতা-মাতা সালাতও ত্যাগ করে থাকেন, তবুও তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে।” (📚 লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১৪৪; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফতওয়া নং-৭৭২২)।
❓সন্তানের উপর পিতা-মাতা বিনা কারণে জুলুম করলে সন্তানের করণীয় কী?
বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন:
🤲 “হে প্রশ্নকারী! পিতা-মাতার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যে অত্যাচার হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমি আপনাকে ধৈর্যধারণের পরামর্শ দিচ্ছি এবং অত্যাচারের কারণ জানার চেষ্টা করতে বলছি। প্রয়োজনে আপনি পিতা-মাতাকে যুলুমের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন এবং শরীয়ত অনুযায়ী আপত্তিকর না হলে সেগুলো বর্জন করুন। যদি কোনো কারণ ছাড়াই আপনার উপর যুলুম করা হয়, তবে প্রতিরোধের জন্য পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সমাজ অথবা কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সাহায্য নিন, যার কথা আপনার পিতা-মাতা মানবেন।
🎯 তাছাড়া, সদাসর্বদা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করুন এবং মন্দ আচরণকে ভালো ব্যবহার দিয়ে প্রতিহত করুন।
📖 আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট, ফলে আপনার ও যার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।’ (সূরা আল-ফুছছিলাত: ৩৪)” (📚 ফতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনে বায, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফতওয়া নং-৭৫৮৩)।
🖋 উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
🌐 BongoCyber Blog Post
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.