পরকীয়া কাকে বলে? মানুষের পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণগুলো কি কি? ইসলামে পরকীয়ার শাস্তি কি? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ইসলামে পরকীয়ার শাস্তি কি? পরকীয়া কাকে বলে? পরক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার কারণগুলো কি? | BongoCyber |
💔 পরকীয়ার পরিচয়:
‘পরকীয়া’ একটি বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। এর অর্থ হলো, বিবাহিত কোনো নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক বা যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া। এটি সমাজে অত্যন্ত নেতিবাচক হিসেবে গণ্য এবং পরিণতি হয় সর্বদা মর্মান্তিক ও ধ্বংসাত্মক।
মূলত পরকীয়া হলো, বৈধ বিবাহ বন্ধনের বাইরে নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
> "ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না। এটা অত্যন্ত অশ্লীল এবং খারাপ পন্থা।" (সূরা বানী ইসরাঈল: ৩২) 📖
⚠️ পরকীয়ার ভয়াবহতা:
আল্লাহ তা‘আলা গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন 📜।
> "আর গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতাকে আল্লাহ হারাম করেছেন।" (সূরা আরাফ: ৩৩).
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর উম্মতের মধ্যে ব্যভিচারের প্রসারকে খুবই ভয় করতেন, কারণ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হয়ে যায় ⚡।
> "যখন কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার মধ্যে ঈমান থাকে না।"
(সহীহ বুখারী, হা/২৪৭৫)
🙏 দু'আ কবুল হয় না:
অপর হাদীসে এসেছে, যে নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তার দু'আ আল্লাহ কবুল করেন না ❌।
> (ত্বাবারাণী আওসাত্ব, হা/২৭৬৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৭৩, সনদ সহীহ).
🔥 পরকীয়া ও আযাব:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
> "যখন কোনো গ্রামে ব্যভিচার ও সূদ প্রসার লাভ করে, তখন তারা নিজেদের উপর আল্লাহর আযাবকে হালাল করে নেয়।"
(মুসতাদরাকে হাকেম, হা/২২৬১; সহীহ আত-তারগীব, হা/২৪০১, সনদ সহীহ).
👵 বৃদ্ধ বয়সের পরকীয়া:
বৃদ্ধ বয়সে পরকীয়ায় জড়ানো অত্যন্ত জঘন্য এবং এর শাস্তি কঠোর 💀।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
> "তিন ব্যক্তির সাথে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। তারা হলো-
1️⃣ বুড়ো ব্যভিচারী
2️⃣ মিথ্যুক শাসক
3️⃣ অহংকারী দরিদ্র"
(সহীহ মুসলিম, হা/১০৭)
পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণ:
বর্তমান সমাজে পরকীয়ার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে📈। বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল তাঁর ‘দ্য স্টেট অব অ্যাফেয়ার’ গ্রন্থে পরকীয়াকে ক্যান্সারের সাথে তুলনা করেছেন🧠. বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
1️⃣ ইসলামী শিক্ষার অভাব:
ইসলাম নারী-পুরুষের চরিত্রের হিফাযতের জন্য বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে হারাম ঘোষণা করেছে 🛑।
> "বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম ও এর ভয়াবহ শাস্তি না জানার কারণে মানুষ পরকীয়ার মতো নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে।"
(সূরা আন‘আম; ৬/১৫১) 📜
2️⃣ সামাজিক কারণ:
ইসলাম সামর্থ্যবান পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও, সমাজ অনেক সময় তা ভাল চোখে দেখে না।
> "যৌন চাহিদার অতৃপ্তি থেকে অনেকেই এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।"
অপরদিকে, দুর্বল বা অসুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রেও নারী তালাকের ভয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়তে পারে 😔。
(সূরা নিসা ৪/৩) 📜
3️⃣ পর্দাহীনতা:
পর্দাহীনতা পরকীয়ার অন্যতম কারণ।
নারী-পুরুষের দেখা-সাক্ষাৎ ও কথোপকথন এর মাধ্যমে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। শয়তান এই সম্পর্ককে আরও সুশোভিত করে উপস্থাপন করে এবং পরকীয়ার দিকে নিয়ে যায় 😈।
> "ইসলাম পর্দাহীনতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।"
(তিরমিযী হা/১১৭৩; সহীহাহ হা/২৬৮৮; সহীহুল জামে হা/৬৬৯০) 📜
4️⃣ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা:
অবাধ মেলামেশা পরকীয়ার একটি বড় কারণ।
আজকাল নারীরা চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে যায়, যেখানে তারা পর পুরুষের সাথে মেলামেশা, কথাবার্তা ও ঠাট্টা-মশকরায় লিপ্ত হয়।
> "ইসলামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।"
(বুখারী হা/৫২৩২; মুসলিম হা/২১৭২; তিরমিযী হা/১১৭১) 📜
পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণসমূহ:
5️⃣ গায়র মাহরামের সাথে সফর করা:
মেয়েদের মাহরাম ছাড়া একাকী বা গায়র মাহরামের সাথে সফর করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন🚫। কারণ এতে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের সম্ভাবনা দেখা দেয়। অনেক সময় পরকীয়ার কারণেও নারী-পুরুষ নিজেদের কামনা-বাসনা পূরণের জন্য বিভিন্ন স্থানে সফর করে। এজন্যই ইসলাম মাহরাম ছাড়া নারীদের সফর নিষিদ্ধ করেছে, এমনকি হজ্জের মত ফযীলতপূর্ণ সফরও মাহরাম ছাড়া জায়েয নয়।
> (বুখারী হা/১৮৬২; মুসলিম হা/১৩৪১; আবু দাউদ হা/১৭২৬; সহীহুল জামে‘ হা/৭৬৫০) 📜
6️⃣ মাহরাম ব্যতীত নারী-পুরুষের নির্জনবাস করা:
গায়র মাহরাম নারী-পুরুষের নির্জনে একত্রিত হওয়া হারাম ঘোষণা করা হয়েছে🛑।
আজকাল দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, ড্রাইভার-মহিলা গৃহকত্রী ইত্যাদি সম্পর্কগুলোতে পরকীয়ার ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে।
> (তিরমিযী হা/১১৭২; মুসনাদ আহমাদ হা/১৪৩২৪; বুখারী হা/১৮৬২, ৩০০৬; মুসলিম হা/৩৪১) 📜
7️⃣ ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া:
পরকীয়ার আরেকটি কারণ হলো ছেলে-মেয়ের মতামতকে উপেক্ষা করে বিয়ে দেওয়া💍।
অভিভাবকরা নিজেদের সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়া করে বিয়ে দেন, কিন্তু ছেলে-মেয়ের পছন্দ ও মতামতকে গুরুত্ব দেন না। ফলস্বরূপ, বিবাহিত জীবন সুখের হয় না এবং এক সময় পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে 💔।
8️⃣ দৈহিক অক্ষমতা:
নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহ হয়, কিন্তু দৈহিক চাহিদা পূরণ না হলে অনেকেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, "মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে" 🧠。
9️⃣ পশ্চিমা সংস্কৃতি:
পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণও পরকীয়ার একটি বড় কারণ।
পশ্চিমারা খোলামেলা পোশাক, বেপর্দা চলা ইত্যাদিকে অন্যায় মনে করে না। অনেক মুসলিম ছেলে-মেয়েরা পশ্চিমাদের অনুকরণে পোশাক ও জীবনধারা অনুসরণ করে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে🛑。
🔟 প্রযুক্তির সহজলভ্যতা:
প্রযুক্তির প্রসার যেমন জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে📱💻।
মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমে পরিচয়ের মাধ্যমে অনেকেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।
1️⃣1️⃣ আইনের দুর্বলতা:
আধুনিক সমাজে পরকীয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা না হলেও আইনি দুর্বলতার কারণে এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে⚖️।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে, পরকীয়ায় লিপ্ত স্ত্রীর কোনো শাস্তির বিধান নেই। তবে স্ত্রীর প্রেমিকের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
> (দন্ডবিধি ৪৯৭ ধারা) 📜
🕌 ইসলামে পরকীয়ার শাস্তি:
1️⃣ অবিবাহিত নারী-পুরুষের শাস্তি:
যদি পরকীয়ার জড়িত দুই জনের একজন অবিবাহিত হয়, তার শাস্তি হলো:
১০০ বেত্রাঘাত 🏑
এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন 🏝️
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘ব্যভিচারী অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে, অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে।’
> (সূরা নূর; ২৪/২, সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০) 📜
2️⃣ বিবাহিত নারী-পুরুষের শাস্তি:
যদি কেউ বিবাহিত হয় এবং পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে, তার শাস্তি হলো:
পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা, যা প্রশাসনের মাধ্যমে কার্যকর হবে 🪨
> (সহীহ বুখারী, হা/৬৮৭৮) 📜
⚖️ পরকালীন শাস্তি:
জান্নাতে প্রবেশের অধিকার হারাবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো: বৃদ্ধ/বিবাহিত ব্যভিচারী, মিথ্যুক শাসক, এবং অহংকারী ফকীর।’
> (সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪১৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪৬১, সনদ সহীহ) 📜
🌙 পরকীয়ার ভয়াবহ দৃশ্য:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার ফজরের সালাতের পর একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করছিলেন। তিনি বলেন,
‘আমরা একটি গর্তে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মতো ছিল🔥। এর তলদেশে ছিল আগুন। এর মধ্যে কতিপয় উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল, যারা আগুনের শিখা উপরে উঠলে উপরের দিকে উঠে আসত এবং পরে আবার নিচে চলে যেত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হলো ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।’
> (সহীহ বুখারী, হা/১৩৮৬, ২০৮৫) 📜
🚨 পরকীয়ার ঘৃণ্য পরিণাম:
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘আমি স্বপ্নে কিছু লোক দেখলাম, যাদের শরীর ফুলে গেছে এবং তাদের থেকে খুব দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল, যা ভাগাড়ের মতো ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হলো, এরা হলো ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী।’
> (মুসতাদরাকে হাকেম, হা/২৮৩৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৯৫১) 📜
👐 দু'আ:
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে পরকীয়ার মতো সমাজ বিধ্বংসী ভাইরাস থেকে রক্ষা করেন।
আমীন 🤲 (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
👉 ভালো লাগলে পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। জাযাকাল্লাহ খায়রান ❤️ BongoCyber Blog Post
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.