এই বাক্যটি কুরআনের সুরা বাকারা, আয়াত ১৫২ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হলোঃ
"তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।"
📜 এই আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁকে স্মরণ করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। বিশেষ করে জুমআর দিনে এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে মুসলিমদের আল্লাহকে স্মরণ করতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
![]() |
প্রতি জুম'আর সালাতে ইমাম সাহেব এই বাক্যটি কেন বলেন? (ফাযকুরুনি আযকুরকুম ওয়াশকুরুলি ওয়া লা তাকফুরুন) BongoCyber Blog Post |
“ফাযকুরুনি আযকুরকুম ওয়াশকুরুলি ওয়া লা তাকফুরুন।” |
জুম’আর সালাতে যখন ইমাম সাহেব খুতবার সময় বলেন “فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ” (ফাযকুরুনি আযকুরকুম), অনেকেই ঘুম থেকে জেগে উঠেন! পুরো আরবি খুতবা বুঝি না, কিন্তু এই বাক্যটা শোনামাত্রই আমরা বুঝি—এখন খুতবা শেষ, সালাতের সময় হয়েছে। কেউ কেউ তো এতটাই অভ্যস্ত যে “ফাযকুরুনি” শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সালাতের জন্য উঠে দাঁড়ান।
❗ অথচ এই বাক্যটা ঘুম থেকে জাগানোর দু‘আ নয়! এটি সূরা বাকারা, আয়াত ১৫২। আয়াতটির অর্থ কী?
📝
فَاذْكُرُونِي (ফাযকুরুনি) — “আমাকে স্মরণ করো”
أَذْكُرْكُمْ (আযকুরকুম) — “আমিও তোমাদের স্মরণ করবো”
وَاشْكُرُوا لِي (ওয়াশকুরুলি) — “আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও”
وَلَا تَكْفُرُونِ (ওয়া লা তাকফুরুন) — “অকৃতজ্ঞ হয়ো না”
❓ আল্লাহ আমাদেরকে স্মরণ করতে বলছেন কেন? আল্লাহর তো কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই!
💡 আসলে, স্মরণ করার নির্দেশ আমাদেরই কল্যাণের জন্য। ইমাম রাযি (রহ.) তার তাফসিরে তিনভাবে স্মরণের কথা বলেছেন: ১. জিহ্বা দিয়ে
২. অন্তরের মাধ্যমে
৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে
(তাফসিরে রাযি, ৪/১২৩)
মুখ দিয়ে তাঁর প্রশংসা করি, অন্তরে তাঁকে ভয় করি, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে সালাত আদায় করি, সদকা দেই।
📈 স্মরণের ফায়দা
ইমাম তাবারি লিখেছেন, যদি কেউ আল্লাহকে আনুগত্যের মাধ্যমে স্মরণ করে, আল্লাহও তাকে ক্ষমা ও রহমতের মাধ্যমে স্মরণ করেন। এ বিষয়ে এক সুন্দর হাদিস আছে:
“আমার বান্দা যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে আমার মনে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি।” (সহীহ বুখারি, হাদিস নংঃ ৭৪০৫)
🤔 চিন্তা করার বিষয়!
আল্লাহর তো আমাদের স্মরণ বা কৃতজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, অথচ তিনিই আমাদের কল্যাণের জন্য স্মরণ করতে বলেছেন। তাঁর ভালোবাসা নিঃস্বার্থ হলেও শর্তহীন নয়। সূরা মায়িদার ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, যদি আমরা তাঁর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই, তিনি এমন এক জাতিকে দিয়ে আমাদের পরিবর্তন করবেন, যারা আল্লাহকে ভালোবাসবে এবং আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসবেন।
🔍 ইবনুল কায়্যিম (রহ.) এ আয়াত সম্পর্কে বলেন,
“তারা আল্লাহকে ভালোবাসবে এতে অবাক হবার কিছু নেই; অবাক তো তখন, যখন আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসবেন।” (আল ফাওয়াইদ, ১/৬৯)
মায়ের ভালোবাসা, স্ত্রীর ভালোবাসা বোঝা যায়, কিন্তু আল্লাহর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ব্যাখ্যাতীত। তিনি আমাদের জন্য যতো কিছু করেন, আমরা তার কতোটুকু ফেরত দিতে পারি?
ইবনুল কায়্যিম বলেন,
“আসমান ও জমিনের সবকিছুর মালিক আল্লাহ, অথচ তোমাদের থেকে ঋণ চান! তাঁর কাছে সাত সমুদ্রের জলরাশির চেয়েও প্রিয় তোমার চোখের এক ফোঁটা জল— অথচ তাও আমরা ঝরাতে পারি না।” (আল ফাওয়াইদ, ১/৬৭)
🛑 পরেরবার খুতবায় “ফাযকুরুনি আযকুরকুম…” শুনলে, যেন মনে রাখি—এটি নিছক সালাতের প্রস্তুতির সংকেত নয়, বরং এটি বান্দার প্রতি আসমান ও জমিনের রবের গভীর ভালোবাসার এক আমন্ত্রণ।
👇 Please Subscribe Our YouTube Channel 👇
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.