নামাজের দৃশ্যটি ভাইরাল হয়েছে। ব্যাচেলর পয়েন্টের অভিনেতাদের এখানে নামাজ আদায় করতে দেখা যাচ্ছে। যে কোন ভাবে ইসলামের কোন ইবাদত বা অনুসঙ্গ কেউ পালন বা প্রচার করলে তা প্রশংসাযোগ্য। তবে এটি অভিনেতাদের মৌলিক কোন ইবাদতের দৃশ্য নয়। এটা অভিনয়ের দৃশ্য। যার প্রমাণ হলো এখানে নামাজ আদায় করতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিমুল শর্মা ও নাস্তিক মারজুক রাসেলকে। অর্থাৎ এটা একটা গল্পের প্রয়োজনে অভিনীত দৃশ্য।
ব্যাচেলর পয়েন্টে নামাজ আদায়ের দৃশ্য এর আগেও ছিল। শুধু রুমে না, সরাসরি জামায়াতে সাধারণ মুসল্লিদের সাথেও পলাশ, চাষী আলমদের নামাজ আদায়ের দৃশ্যও এ নাটকে আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটক নাস্তিকতা বা ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত নয়। তাদের অপরাধ নাস্তিকতা নয়, তাদের অপরাধ অন্যস্থলে। আর সে অপরাধের কারণেই আমাদের সমালোচনা। ব্যাচেলর পয়েন্টের মূল সমস্যা ধরতে না পারলে নামাজের দৃশ্য দেখেই তাদের 'ফেরেস্তা' ভেবে বোকামি করা ঠিক হবে না।
ব্যাচেলর পয়েন্ট' নাটকের প্রধান দুটি অপরাধ হলো নানান ভাবে পর্নোগ্রাফি প্রমোট ও ইভটিজিং তথা নারী অবমাননা। এখানে দেখানো হয়েছে ব্যাচেলর লাইফের জীবনযাত্রা। আর তুমুল হাস্যরসের আড়ালে ব্যাচেলর লাইফ সম্পর্কে একটি নোংরা চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। যা সমাজের খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রান্তিকচিত্র, কিন্তু তা শুধু দেখানোই হয়নি বরং অনৈতিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্রই নাটকে সুকৌশলে প্রমোট করতে দেখা গেছে।
নারীদের সাথে নানা অশ্লীল বাক্যালাপ ও ইভটিজিংকে তামাশা ও মজা আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে নাটকটিতে। যেমন: নাটকটি জুড়েই কল গার্ল হিসেবে নারীকে 'আগুন' বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই কথা কবিলা'রা না বলে কোন হুজুর ওয়াজে বললে, নারীবাদী'রা এতোক্ষণে রাস্তায় নেমে সমগ্র হুজুরদের পিন্ডি চটকাতো! মিডিয়ায় ওয়াজ নিষিদ্ধের দাবি উঠতো! কিন্তু নাটকে বলায় এখন আর তাদের কাছে নারী অবমননা হচ্ছে না। আবার দেখা যায়, ক্লাসের সহপাঠী বা বাড়িওয়ালার মেয়েকে এসো ' আমরা খেলা শুরু করি' বলে বা বিভিন্ন ভাষায় কু-প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। সহপাঠীদের মুখের উপর সেক্সি বলে বিব্রত করা। ব্যাচেলর পয়েন্টে এভাবে এক্সট্রিম পর্যায়ের ইভটিজিং করাকেও মজা হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। এগুলো ছোট ছোট করে কেটে পোস্ট করে ভাইরাল করাতে নাটকের কিছু দৃশ্যপট আমাদের নজরেও আসে। আবার অনেকে ত্রুটি গুলো আমাদের কাছে তুলে ধরাতেও আমরা জেনে শংকিত হই।
কখনো দেখানো হয়েছে, নারী নিয়ে কোন বড় ভাই রুম ডেট করতে চলে আসছে ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে, আবার কেউ গার্লফ্রেন্ডের বাসা খালি আছে নাকি খোঁজ নিচ্ছে! এভাবেই ব্যাভিচার করার সুযোগ খুঁজতে দেখা যাচ্ছে ব্যাচেলরদের। বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার যে জঘন্য অপরাধ তা নাটকে একদমই অনুপস্থিত বরং উল্টো এটাকেই ইনজয় বা স্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নাটকটিতে মদ খাওয়া ও পিনিক(মাতাল) আনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, ব্যাচেলর লাইফ মানেই মদ খাওয়া আর মাতলামি করা। এটাই নাকি ব্যাচেলর লাইফের সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতা! আসলেই কী ব্যাচেলর লাইফ এমন? পড়াশোনা বাদ দিয়ে নারী আর মাতলামিতে বিভোর হয়ে থাকা?
শুধু ধান্দা করে অন্যের টাকা খাওয়ার চেষ্টা?
যদি কিছু ছেলে এমন হয়েই থাকে তাদেরকে কালপ্রিট না বানিয়ে হিরো হিসেবে উপস্থাপন সুস্থতা হতে পারে না।
নাটকের অন্যতম চরিত্র হাবুকে দেখানো হয়েছে বুয়াদের প্রতি দূর্বল (নেতিবাচক অর্থে)। পুরো নাটক জুরেই মাদক ও নিষিদ্ধ যৌনতাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। মারজুক ওরফে পাশাকে দেখা যায় বাড়িওয়ালীর সাথে ভাব জমাতে। নাটক জুড়েই গ্রুপিং, আধিপত্য বিস্তার, মারামারি, থ্রেটিং থেকে শুরু করে যাবতীয় অন্যায় কার্যকলাপকে বাহাদুরি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর নাটকের মধ্যে অজস্র গালিগালাজ তো আছেই। মারজুক রাসেল ও কাবিলার পর্নোগ্রাফি প্রোমোটের পোশাক নিয়ে আলোচনা আর নাইবা করলাম! এছাড়া নারীদেরকেউ দেখানো হচ্ছে পর্নোগ্রাফি আদান প্রদান ও দৃশ্য নিয়ে আলাপ করতে।
এসব নাটক দিয়ে তারা আসলে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে? এগুলো দেখে জাতি কী শিখবে? এ নাটক নারীদের ব্যাপারে কেমন বার্তা দিচ্ছে? শ্রদ্ধার নাকি মজার করার মাংসপিণ্ড! নাটকটিতে সবচেয়ে ভালগার চরিত্র কাবিলাকেই উপস্থাপন করা হয়েছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হিসেবে, এর অর্থ কী নোংরা ও জঘন্যকাজ করা ছেলেরাই বুদ্ধিমান হয়? উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করতে পারে? তাদের গালাগালি ও অসামাজিক কার্যকলাপের প্রভাব কী নাটকটির অসচেতন দর্শকদের উপর পড়বে না?!!!
প্রিয় ভাইরা, আশা করবো কোন মুসলিম ভাই শুধু বিরোধীতার জন্যই নাটকের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর গালির ডালি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেনা না! আর একটা নামাজের দৃশ্য দেখেই তাদের শত অন্যায়ের ঢাল হিসেবে নামাজের ছবি ব্যবহার করবেন না। একটু চিন্তা করুন, নাটকে মেয়েদের যে ধরনের পোশাক পড়িয়ে ছেলেদের সাথে ফি মিক্সিং দেখানো হয়েছে, এগুলো কী কোন ভালো সমাজের চিত্র ? আপনার-আমার বোন কী এমন হোক আপনি চান? মদ,নেশা,ব্যভিচার,গালিগালাজ হালাল নাকি হারাম? যদি হারাম হয়! আপনি কি হারামের পক্ষ নিয়ে মুসলিমদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে চাচ্ছেন? এগুলো কি মানবজাতির জন্যে কল্যাণকর? সমাজের জন্য কল্যাণকর? পর্নোগ্রাফি মতো দেশের ও ধর্মীয় আইনে নিষিদ্ধ বিষয় এভাবে আর কখনো কী বাংলাদেশে প্রোমোট দিতে দেখেছেন?
তাদের অভিনয় বা কোন কারণে অবচেতনে তাদের প্রতি আপনার ভালোলাগা কাজ করতে পারে! কিন্তু তারা যে কাজ শুরু করেছে এতে বিনোদনের আড়ালে অনৈতিকতা ও পাপাচারেরই প্রসার ঘটছে। তাই আর যাই করুন মুসলিম হলে পাপের পক্ষ নিবেন না। দিন শেষে আমরা কেউ পৃথিবীতে থাকবো না, এটাও স্মরণ রাখা উচিত। তাই আমাদের উচিত বাংলাদেশে সকল অশ্লীলতা বেহায়াপনা ছড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
18+ ডেসক্রিপশনের কথা বলে যারা নাটকের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য এটাই বলবো আঠারো বছর হলেই পাপ করা বৈধ হয়ে যায় না, আর মানুষ ফেরেস্তা হয়ে যায় না। তাই যা খারাপ, তা ১৭ বছর বয়সে করলেও খারাপ, ২০ বছর বয়সে করলেও খারাপ। যদি একটা ডেসক্রিপশন দিয়েই যদি অশ্লীলতা ও নারী অবমাননা করা বৈধ হয়ে যায় তাহলে তার দেশে এতো আইন থেকে লাভ কী! গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা সব কিছুর প্যাকাটে একটা ডেসক্রিপশন দিয়ে বিপণন বৈধ করে দিলেই তো হয়। সর্বোপরি ব্যাচেলর পয়েন্ট যা করছে তা কোন নামাজি ব্যক্তি তো দূরে থাক, কোন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের সাথেই যায় না। আর এসব নাটক যদি চলতে থাকে তাহলে তারুণ্যের অধঃপতন ঝড়ের গতিতে নয় সাইক্লোনের গতিতে ঘটবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
✍️লেখা: Monir Ahmed Monir
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.