Adds

রাগান্বিত হবেন তো জান্নাত হারাবেন | রাগ, ক্রোধ বা জেদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জেনে রাখুন

রাগ করোনা... জান্নাত তোমার হবেই। 

রাগান্বিত হবেন তো জান্নাত হারাবেন | রাগ, ক্রোধ বা জেদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জেনে রাখু


রাগ, ক্রোধ অথবা জেদ – যে নামেই ডাকি না কেনো দুনিয়াতে বহু অনিষ্টের কারণ হলো এগুলো। এই রাগ নামক বস্তুটি ধ্বংস করে দিতে পারে একটি জীবন, নিজের সম্পদ, মান-সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক সবকিছুকেই। এ কারণেই রাসূল ﷺ এটাকে বলেছেন – "আদম সন্তানের অন্তর একটি উত্তপ্ত কয়লা।" (১)


আল্লাহ (সুবাহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন – "...যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।" (২)


মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। আল্লাহ তাআলা মূত্তাকি লোকদের প্রশংসা করে বলেন – "যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।" (৩)


আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ প্রচুর আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, যখন তাঁকে অপমান, অপদস্থ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। রাসূল ﷺ বলেন – "যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।" (৪) 


রাগ সংবরণকারী ও ক্ষমাকারী ব্যক্তিরাই মুত্তাকি বা তাকওয়ার অধিকারী। এ সব লোকদেরকে আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দান করেন। আল্লাহ বলেন – "তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবমান হও; যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকি তথা আল্লাহ ভিরুদের জন্য।" (৫)


এক ব্যক্তি রাসূল ﷺ কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। রাসূল ﷺ প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’ (৬)


এ ছাড়াও রাসূল ﷺ এর জীবন থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা দেখতে পাই, যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, যখন রাগ আমাদের গ্রাস করতে চায় কিংবা আমরা রাগান্বিত অবস্থায় থাকি, তখন আমাদের কী করা উচিত? তার প্রতি রাগ না রেখে তাকে ক্ষমা করে দেয়াটাই উত্তম সফলতা। রাগের পরিবর্তে ক্ষমা করে দেয়াকে সফলতা বলার অন্যতম কারণ হলো – স্বাভাবিক অবস্থায় কাউকে কোনো অন্যায় বা ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেয়া সহজ ব্যাপার। কিন্তু রাগের সময় সামান্য বিষয়ে ক্ষমা করাও কঠিন। প্রিয়নবীর উপদেশ হলো এ কঠিন মুহূর্তেও নিজেকে সংবরণ করে ক্ষমা করা।


রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন – "আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।" (৭)


রাগ প্রকৃতপক্ষে কোন সমাধন নয়। আর এটা সমাধান হতেও পারে না। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল (হাফি.) বলেন – "প্রচন্ড ঝড় একটি জাহাজকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারলেও সামান্য একটি সুতোর গিঁট খুলতে পারে না। রাগ এরকমই একটি বিষয়। এটি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারে, কিন্তু কোন সমাধান দিতে পারে না।"


জীবনের এক কঠিনতম সময়ে রাসূল ﷺ তায়েফে গিয়েছিলেন, আশা করেছিলেন তায়েফবাসী তাঁর কথা শুনবে, তাঁকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি পেলেন অপমান। তাঁর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পায়ে গিয়ে জমাট বাঁধল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একজন ফেরেশতা এলেন। ফেরেশতা তায়েফের দুপাশের পাহাড় এক করে দিয়ে তায়েফবাসীকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল ﷺ এর উত্তর ছিল – "(না, তা প্রয়োজন নেই..) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশে এমন সন্তান দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।" (৮)


চিন্তা করুন – এত অপমান সহ্য করার পরেও তিনি কতটা দয়া করেছিলেন। আল্লাহ রাসূল ﷺ এর জীবন আদর্শকে আমাদের জীবনের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হতে পারে এটা অকারণে বলেননি। নবীজী ﷺ এর প্রত্যেকটা কর্ম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ এবং অনুকরণীয়। আমরা সামান্য কারো সাথে কথা কাটাকাটি হলে, মতের অমিল হলে, নিজের মতের বাহিরে গেলে কতটা রাগান্বিত হই। নিজের ক্রোধকে সামাল দিয়ে রাখতে পারি না, আমাদের প্রতিপক্ষকে কি রেখে কি বলি যার কোন সীমা থাকে না। আমাদের কি জানা নেই রাসূল ﷺ আমাদের কী বলেছেন? তিনি বলেন – "যখন তুমি ক্রদ্ধ হবে তখন চুপ থাকবে।" (৯) যেখানে রাসূল ﷺ রাগান্বিত হয়ে গেলে চুপ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন আর সেখানে আমরা তর্ক-বিতর্ক, কত হট্টগোল করছি...


নিজেকে বীর মনে করছি কারো সাথে রেগে তার উপর নিজের হস্তক্ষেপ করতে পেরে। আমার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি জীবনে অনেক দেখেছি এইরকম হট্টগোল। সিঙ্গারা খাওয়া নিয়ে মারামারি, সামান্য তুচ্ছ কারন নিয়ে মারামারি। এই রাগ কখনোই কাউকে বীর বানিয়ে দিতে পারে না। নবীজি ﷺ একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো?’ তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে।’ নবী করিম ﷺ বললেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (১০)


আমাদের সকলের উচিত নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। সামান্য কারনে একজন অন্যজনের সাথে রাগ না করা। প্রত্যেকটি পরিবারে একটি সাধারন সমস্যা রাগ করে এক ভাই আরেক ভাইয়ের সাথে কথা বলে না। এক বোন আরেক বোনের সাথে কথা বলে না। মা ছেলের সাথে কথা বলে না, আরো কত কি (!) কিন্তু এভাবে রাগ করে কারো সাথে কথা বলাটা বন্ধ করে দেয়াটি কি ঠিক! রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন – "তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখবে।" (১১)


আমাদের পরিবারের যাদের সাথে আমাদের পরিবারের মনোমালিন্য আছে, আমরা সকলে এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি পদক্ষেপ নিই – যার সাথে আমাদের রাগ আছে, তাদের ফোন দিয়ে কিংবা তাদের সাথে সরাসরি দেখা করে সালাম দিয়ে এমন ভাবে কথা বলা যেন মনে হয় আমরা কখনো রাগই করিনি। আমাদের প্রত্যেকের ফ্যামিলিতে এমনটা আছে। সুতরাং, আমরা সবাই যদি এই রাগকে মন থেকে ছুড়ে ফেলে সম্পর্ককে পুনরুদ্ধার করি তাহলে আল্লাহ ও খুশি হবেন, আমাদের জন্যেও রহমত। আল্লাহ বলেন – "সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর।" (১২)


পরিশেষে একটি হাদিস শোনাতে চাই, যা এই পোষ্টের টাইটেল হিসেবে দিয়েছি। আর তা হলো, রাসুলুলাহ ﷺ বলেছেন – “তুমি রাগ করো না, তাহলে জান্নাত তোমার হবে।” (১৩)


আল্লাহ আমাদের ক্রোধ-দমন করার তৌফিক দান করুন। আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। নিজেদের আমলনামাটা থেকে ছোট বড় সকল প্রকার কবীরাহ, সগীরাহ গোনাহ গুলোকে মুছে ফেলার তৌফিক দান করুন। (আমীন)


"আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু ওয়াআতুবু ইলাইহ্"

❒ ফুটনোটঃ

[১] তিরমিজি।

[২] সুরাহ আল-ইমরান, আয়াত : ১৩৪।

[৩] সুরাহ শুরা, আয়াত : ৩৭।

[৪] ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪১৮৬।

[৫] সুরাহ আল-ইমরান : আয়াত : ১৩৩।

[৬] সহীহ বুখারি, খণ্ড : ৮, অধ্যায় : ৭৩, হাদিস নং ১৩৭।

[৭] ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪১৮৯।

[৮] সহীহ বুখারি, খণ্ড : ৪, অধ্যায় : ৫৪, হাদিস নং ৪৫৪।

[৯] আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১৩২০। 

[১০] সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬৮৪।

[১১] রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিস নং ১৫৯৯।

[১২] সূরাহ হুজুরাত, আয়াত : ১০।

[১৩] সহীহ আল-জামি, হাদিস নং ৭৩৭৪। আল-তাবারানী, ফাতহুল বারী, হাদিস নং ৪/৪৬৫। (হাদীসটি – সহীহ)

✅ Share your Friend... He still need to Zannat - BongoCyber Blog



Post a Comment

0 Comments