![]() |
একজন বাবার গল্প | বাংলা শিক্ষনীয় গল্প | BongoCyber Blog Post |
ছোট খাটো একটা চাকরি করি।গত মাসে বড় মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছি,প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে।আজ ইফতারি দিয়েছি জামাইয়ের বাড়িতে,প্রায় ১৫০০০ টাকা খরচ করে।একটু আগে মেয়ের ফোন।
বাবা কেমন আছেন?
-হ্যা মা ভালো।তুই ভালো আছিস ত?
আছি বাবা ভালো।
-এইভাবে বলছিস কেনো??তোর শ্বশুর রা খুশি হয়েছে তো?
ওরা কিছু বলেনি।ফুফু(জামাইয়ের ফুফু) বলেছে ইফতারি একটু কম হয়েছে।
-(তখন আমার চোখের পানি টলটল করছিল)আচ্ছা মা বলিছ,পরের বার থেকে আরো বাড়িয়ে দিবো।
বাবা শুনো।তুমি আমাদের বাড়িতে ঈদে কাপড় দিবে না?
-হ্যা মা দিবো।কেনো?
তুমি কাপড় দিওনা।খালা(জামাইয়ের খালা)বলেছে কাপড় দিলে সবার পছন্দ হবে না।কাপড় না দিয়ে টাকা দিয়ে দিতে।৩০,০০০ টাকা দিলে,সবার নাকি হয়ে যাবে।
-আচ্ছা মা।তুই চিন্তা করিস না।আমি এখন ও বেঁচে আছি।
(আমার বোঝতে দেরি হলনা,এতক্ষনে মেয়ের চোখের অনেক জল গড়িয়ে পড়েছে)
আচ্ছা বাবা,এখন রাখি।
-আচ্ছা মা ভালো থাকিস।
রাতে ছোট ছেলে নামাজ থেকে আসলো।
বাবা তুমি আছো?
-হা আছি।কিছু বলবি?
হ্যা,ঈদের পর ২য় সপ্তাহে সেমিস্টার ফাইনাল।বেতন, ফর্ম ফিলাপ ও অন্যান্য সহ ২৫হাজার টাকা লাগবে। আমার টিউশনির কিছু টাকা আছে। আপনি ২০ হাজার দিলে হবে।
-আচ্ছা দেখি। খেয়ে ঘুমিয়ে পর।
না বাবা,লেট হলে এক্সাম দিতে পারবো না।
নতুন জামাই বাড়িতে মৌসুমী ফলমুল দিতে হবে। তাতে ১০-১৫ হাজার টাকা দরকার। ঈদের পরে আবার কোরবানি,মেয়ের বাড়িতে গরু দিতে হবে।গরুর যে দাম,কমপক্ষে ৫০০০০ টাকা তো লাগবে।আবার নিজের জন্য ও একটা লাগবে।
এইখানে শেষ নয়,,আরো রয়েছে মেয়ের বাড়িতে দেওয়ার বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন আয়োজন।
এই সব চিন্তা করতে করতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছি।নাবিলার মা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছিলো,কিছু না বলে শুয়ে পড়েছি।
মাথায় একটা বিষয় কাজ করছে।টাকা!!টাকা!! আর মেয়ের সুখ।
এইভাবে রাত ১২ টা।হঠাৎ করেই বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেছে। ধীরে ধীরে আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমার হাত-পা গুলো অকেজো হয়ে আসছে। আমার সারা জীবনের অনেক স্বপ্ন অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সেই চিন্তা গুলো এখনো আমার পিছু ছাড়ছেনা।
পরদিন সকাল বেলা। সবাই কান্না কাটি করছে। আমার ছোট মেয়ে আর আমার প্রিয় স্ত্রী সব চেয়ে বেশি কাঁদছে।শুনলাম বড় মেয়ে ইতি এরই মধ্যে এসে গেছে।সবার দিকে চেয়ে থাকলাম। অনেক কিছু বলতে চাচ্ছি। কিন্তু কিছুই বলতে পারতেছিনা। ঠিক ২ মিনিট পর আর কিছু জানিনা।
এইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বাবা।আর বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত ছেলে মেয়ে। হয়তো অনেকে এখন ও জানে না,তাদের বাবার মৃত্যুর রহস্য।
এইভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয় বাবাদের।।
আমাদের এই কু-প্রচলন কি পরিবর্তন হবে না??
হচ্ছে না কেনো??কেন হচ্ছে না ??
শহরে কিছুটা পরিবতর্ন হলেও গ্রামে ৯০% লোক এই কূ-প্রচলন থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
হায় আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ ঈমানের উপর চলার তৌফিক দান করুন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সহিত পড়ার তৌফিক দান করুন
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.