যাচ্ছিলাম এক ফ্রেন্ডের সাথে কমলাপুর রেলওয়ে। যাত্রাবাড়ী থেকে অটোরিকশা নিলাম। রিক্সা চালকের আসনে বসেছেন একজন সংগ্রামী "মা"। এই প্রথম দেখা এমন কিছু। কথা হলো রিক্সা চলন্ত অবস্থায়। ছোট দু'টো মেয়ে আছে তার । বড়ো মেয়ের বয়স ১৩বছর। মাদরাসায় পড়াচ্ছেন।হেফজ পড়ছে এখন সম্ভবত। ছোট মেয়ের বয়স আড়াই বছর।
সন্তানরা বড়ো হয়ে যখন শুনবে, "মা" তাদের অন্যের অর্থে চলেছেন। আমাদেরও চালিয়েছেন অন্যের অর্থে। সেদিন হয়তো তারা বুক ফুলিয়ে গর্ব করতে পারবে না। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন। অন্যের করুণার অপেক্ষায় থাকতেন, তাদের আত্মমর্যাদা সেদিন হয়তো তাদের আহত করবে, ব্যথিত করবে। এমন মনোভাব থেকেই হয়তো এ পথ বেছে নিয়েছেন এ সংগ্রামী "মা"।
জিজ্ঞেস করলাম আঙ্কেল কি করেন? এতো টুকুই বললেন: শারীরিক ভাবে দূর্বল তিনি। বেশি কিছু আর জিজ্ঞেস করিনি। অল্পতেই বুঝে নিয়েছি। একজন "মা" পরিবার কে আগলে রেখেছেন। স্বামীর অক্ষমতা স্বত্তেও ভিক্ষাবৃত্তি করছেন না। নিজের সবটুকু দিয়ে পরিবার চালাচ্ছেন।
জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। গাড়ি চালানোর সময়কাল তার ১০ বছর। এই রিক্সা নিয়েছেন ২বছর হলো। নারী হয়ে এই পেশায় মানুষ কোন চোখে দেখে? কতটা মূল্যায়িত আপনি এ পেশায়? এমন প্রশ্নে বললেন: একশ জন থেকে সর্বোচ্চ ত্রিশ জন উঠে। বাকিরা অবহেলিত চোখে দেখে। রিক্সায় উঠতে চান না। যদি কোন রিক্সা চালক বলে যাবনা, আর আমি যাব যদি বলি, তবুও মানুষ উঠে না আমার রিক্সায়।
আহ্,, আমরা কতটা পাষাণ! কতটা অহমিকা আমাদের মনে। মানুষ হয়ে মানবিকতা নেই আমাদের। অসহায়দের সাহায্য তো করিই না বরং তাদের সংগ্রামও পছন্দ করছি না। কর্তব্য নয় কি দেখে দেখে তাদের রিক্সায় উঠা? অল্প পথ চলে দূরের ভাড়া দিয়ে নেমে পড়া? অতিরিক্ত কিছু হাতে তুলে দেয়া ?
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.