গল্পের নাম: তবুও ভালোবাসি💕
লেখনিতে: সাদিয়া আফরোজ
আনান ফ্রেশ হয়ে তুরকে উঠিয়ে দিলো। তুর হেলতে দুলতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে নিলো । আনান তুরের চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে দিলো । তুর অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,, বাহ সময় তো কম লাগলো।
তুরের কথায় আনান ভাব নিয়ে গেঞ্জির কলার টানতেই তুর পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আনানের দুগাল টেনে বলে,, আমার জামাইটাহ্ কত্তো গুনী!
তুরের এহেন কান্ডে আনান হা হয়ে গেছে। আনান ভাবতেই পারেনি তুর এমন কিছু করবে।
আনান হা করে তাকিয়ে আছে ।
তুর চুলে খোঁপা করতে করতে আয়নার সামনে গিয়ে হিজাব বেঁধে নিলো। আনান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তুর হিজাব বেঁধে আনানের সামনে গিয়ে গেন্জি টেনে বললো: ওই নানরুটি নাস্তা করতে যাবেন নাকি আমি গিয়ে খালাদের সাথে খেয়ে নিবো!
আনানের ধ্যান ভেঙ্গতেই হকচকিয়ে তুরের দিকে বলে, না ! আমি আসছি।
তুর শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
আনান নিজের গালে হাত ছুঁইয়ে শব্দ করে হেঁসে বলে উঠলো: যাক আমার আর একটা গুন আমার মায়াবতীর চোখে পড়লো।
আনান আসার পর সবাই নাস্তা সেরে নিলো। তুর ঘুরে ঘুরে বাড়ি দেখছে। আনান এইফাকে তৈরি হয়ে নিলো। আনানের আদেশ অনুযায়ী একটা গাড়ি মাদার ক্রিস্টোফারের বাড়িতে গেলো। তুর বাগানে দাঁড়িয়ে মালী কাকার সাথে গল্প করছে , আর মালী কাকাও তুরের সাথে হেসে হেসে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
খালা এসে তুরকে বললো আনান তাকে ডাকছে। তুর বেশ বিরক্ত নিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুমে গেল।
আনান গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে তাকিয়ে দেখে তুর একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুমে ডুকছে ,আনান পারফিউমের বোতলটা রেখে তুরের সামনে যেতেই তুর বিরক্ত হয়ে বলে,, কেন ডেকেছেন?
আনান মুচকি তুরের দুগালে হাত রাখলো।
আনানের স্পর্শে তুর কেঁপে উঠলো। আনান বুঝতে পেরে ঠোঁট এলিয়ে হেঁসে আদুরে গলায় বলে,, তুর আমি বাইরে যাচ্ছি আসতে দেরি হবে ,, একদম দৌড় ঝাঁপ করবে না। এগারোটার দিকে খালা যা দিবে তা খেয়ে নিবে, একদম বাহানা চলবে না । আমি যাওয়ার পর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আসবে । গেটের বাইরে পা রাখবা না কিন্তু । বোর হলে টিভি তো আছেই। আর কিছু প্রয়োজন হলে খালাকে বা রহিম চাচাকে বলবে। দুপুরে সবাই মিলে একসাথে বসে খেয়ে নিও কেমন?
আনানের আদুরে গলায় বলা প্রতিটা কথায় তুরের বিরক্তিকর চাহনি ক্রমশো শিথিল হয়ে এলো।
আনান তুরের কপালে শব্দ করে চুমু খেলো।
এতে তুরের শরীরের এক প্রকার ভুমিকম্প বয়ে গেলো। অদ্ভুত অনুভূতি হলো যাকে না ভালো লাগার নাম দেয়া যাবে না খারাপ লাগার । আনান তুর দুগাল ছেড়ে দিয়ে তুরকে একবার দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বেরিয়ে পড়লো।
তুর কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে জোরে নিঃশ্বাস ফেললো, যেন এতক্ষন নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। বুকের বা পাশে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলে,, এমন লাগছে কেন! নিশ্চয়ই আমার বড় কোনো অসুখ হয়ে গেছে। সব দোষ ওই নানরুটির ।
তুর আসফাস করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ডাইনিং টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করলো।
আনান লেপটপ অন করে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মুচকি হেসে মনে মনে বললো,, একটু একটু করে অনুভূতি গুলো বুঝতে শেখো প্রিয়।
তুর বাইরে বের হয়ে বাগানে গেলো। দোলনা দেখে দোলনায় বসে দোল খেতে লাগলো।
দারোয়ান পুরো গেইটা খুলে দিল। গেট দিয়ে প্রবেশ করলো গাড়ি। তুর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভাবছে,, এই বেটা গেলো যে দশ মিনিটও হয়নি ,এর মধ্যেই চলে এলো? কাম কাজ নাই নাকি!
তুরের ভাবনার রেশ কাটলো গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দে।
তুর কিছুক্ষণ তাকিয়ে দোলনা থেকে উঠে দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ।
ক্যাথি আর স্টেলা দুইজন একসাথে তুরকে জড়িয়ে ধরলো।
তুর ওদের দেখে খুশি হয়ে গেল। ক্যাথি তুরের হাত ধরে বলে,, একদিন দেখিনি মনে হচ্ছে কতো বছর পর দেখা হলো। স্টেলা খুশি হয়ে বললো: আমার তো তোকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছিল না কাল সকালে মাদার,,,,
ক্যাথি স্টেলাকে বলতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলে,, আব হ্যা হ্যা কাল সকালে আমরা স্টেলার বাবার সাথে ট্রিপে গেছি তাইনা স্টেলা?
স্টেলা জোর পূর্বক হেসে বলল,, হ্যা তাইতো।
তুর বিরক্ত হয়ে বললো,, রাখতো টুর মুর। আগে বল তোরা কি ভাবে এলি?
স্টেলা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,, জিজু গাড়ি পাঠালো আসার জন্য তাই চলে এসেছি ,আর সাথে করে তোর বই খাতা সব নিয়ে চলে এসেছি।
গাড়িতে সব আছে মাদার গুছিয়ে দিয়েছে।
তুর বইয়ের কথা শুনতেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, বেরহো বাড়ি থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে যা! এখন মানে এখনই। এতো উপকার করতে বলি নাই। শত্রু কোথাকার।
ড্রাইভার আংকেল এই নমুনা দুইটা নিয়ে আগের জায়গায় রেখে আসুন।
তুরের কথায় ড্রাইভার ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে।
স্টেলা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে।
ক্যাথি মুচকি হেসে তুরের হাত ধরে টেনে বলে,, এমন করেছিস কেন জানটুস? চলে গেলে তুই যদি খুশি হোস তাহলে গেলাম!
তুর ক্যাথির হাত টেনে ধরে বলে,, কেতলি যাস না। কিন্তু বই গুলো ফেলে দিয়ে আয় প্লিজ!!
স্টেলা তুরের হাত ধরে বলে,, আরে তুই তোর জামাইকে দিয়ে দিস। আসার সময় মোড়ের পাশে ভাঙ্গারির দোকান আছে দেখলাম , ওইখানে কেজি মাপা বেঁচে দিয়ে তোর জন্য কটকটি নিয়ে আসবে।
তুর খুশি হয়ে স্টেলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,, ওলে আমার স্টিলরে তোর আইডিয়া এতো জোস ! ইচ্ছে করতেছে কোষে দুইটা চুম্মা দেই।
ক্যাথি বরাবরের মতই মাথায় হাত দিয়ে বিরবির করে বলে,,, গাধা আর তার ছেঁড়া একসাথ হলে যা হয় আরকি।
তুর দু'জনকে নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো তুর । বাড়িটা হইহুল্লোড়ে ভরে উঠলো। তুর মুচকি হেসে মনে মনে বললো,, জামাইটা খারাপ না, শুধু একটু অসভ্য লুচু বদ।
দুপুরে হতেই তুর গিয়ে গোসল সেরে নামাজ পড়ে এলো। দুপুরেও সবাই একসাথে খেয়ে নিলো। বিকালে বাগানে ক্যাথি ,স্টেলা আর বাড়ির সব সার্ভেন্ট নিয়ে আড্ডায় বসলো, সবার মধ্যমনি তুর।
গোধূলির লগ্ন প্রায়
গিটার হাতে তুর বসে আছে একটা চেয়ারের উপর আর সবাই বাগানের মাঝখানে ঘাসের উপর বসে আছে। অপেক্ষা তুরের গানের , তুর গিটারের " কী" গুলো বাজিয়ে টিউন সেট করছে।
তুর মুচকি হেসে সবার দিকে তাকিয়ে গিটার বাজিয়ে গান গাইতে শুরু করলো,,,,
তোমাকে না লেখা চিঠিটা ডাকবাক্সের এক কোণে,,,!
সাদা খামের না না লেখা নাম
এঁকেছে তার গানে,,,!
সেই চিঠির যত লেখা,,,
থাকে একা একা,
সেই গানের না শোনা সুর
একা একা আঁকা,,
ছুঁয়ে যায় তবু কখন এসেএএএএ,,,,
যদি বলি সে সবই তোমারই
একা চিঠি একা একা গান,,,
যদি বলি সে সবই তোমারই,,,,,
একা চিঠি একা একা গান,,,,
সাঁইয়া,, সাঁইয়া ,,সাঁইয়া,,,
তুরের গান শেষ হলো। সাথে সূর্যের রক্তিম আভা আরো গাঢ় হয়ে একপাশে হেলে পড়ে জানান দিচ্ছে বেলা শেষ হলো বলে । সবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে তুর মুচকি হেসে গিটার নামিয়ে রাখলো। সবাই তুরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্টেলা বারাবরই মুগ্ধ আর স্টেলা হাত থেকে ফোন নামি বললো ,, ফাটিয়ে দিয়েছিস দোস্ত। ঠু গুড ইয়ার।
অপর দিকে আরেকজন মোবাইল ফোন বুকে জড়িয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে স্টেলা আর ক্যাথি নাস্তা করে তুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে তুর বসে বসে টিভি দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে।
এমন সময় আনান বাসায় এলো। কোট খুলে হাতে নেয়া চুল গুলো এলোমেলো মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
তুর আনানকে দেখে মুচকি হেসে বলে,, ধন্যবাদ নানরুটি জামাই ! আই লাভ সকালের দেয়া স্টিলের কেতলি সারপ্রাইজ ।
তুরের কথায় আনান তৃপ্তির হাসি হাসছে। ক্লান্তির অবসান তার এই পিচ্চি বউটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তুর আবার টিভি দেখতে লাগল।
আনান তুরের দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে উঠে গেলো।
একেবারে গোসল করে বের হলো। তুরের খাতা বইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে নেমে তুরের কাছে গেলো।
সোফায় তুরের পাশে বসে রিমোট ছিনিয়ে নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে দিলো।
তুর কপট রাগ দেখিয়ে রিমোট নিতে গেলেই আনান হাত উঠিয়ে রিমোট তুরের নাগালের বাইরে নিয়ে গেলো।
তুর রেগে ফেটে পড়ছে।
আনান তা দেখে বলে,, সারা দিন নবিতা , মাশা ,আর ওবোচামা না দেখে একটু রোমান্টিক ছবিও তো দেখতে পারো! এখন দেখো আর কিছু শেখো ।
তুর রেগে টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে নায়ক নায়িকার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে, মুখের কাছে মুখ নিচ্ছে।
তুর চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আনানকে উদ্দেশ্য করে বললো,, চেন্জ করেন ,, ছিঃ ছিঃ কি খারাপ । বন্ধ করেন এইসব দেখা ভালো না।
তুর এতো জোরে চেঁচামেচি করছে যে, সব গুলো সার্ভেন্ট এগিয়ে আসছে। আনান তা দেখে তাড়াতাড়ি করে চ্যানেল চেন্জ করে তুরের মুখ চেপে ধরে বললো,, মেরী মা চুপ হো যা!!! সবাই এইদিকে আসছে দেখলে কি বলবে? চুপ একদম চুপ।
তুর দুহাত দিয়ে আনানকে সরানোর চেষ্টা করছে।শেষে আনান ছেড়ে দিতেই বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ গরম করে বললো,,মুখ চেপে কি মেরে ফেলবেন নাকি! এমনিতেও সকালে মরতে মরতে বেঁচেছি ।
আনান দুষ্টু হেসে বললো,, পিকচার আভি বাকিহে, ইয়েতো স্রেফ ট্রেইলর থা বউ।
তুর ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আনান মুচকি হেসে বলল:: ক্ষিদে পেয়েছে চলো খেয়ে নিবে।
তুর নাকোচ করে বললো,, খাবো না ক্ষিদে নেই।
আনান বাঁকা হেসে বলে,, তাহলে আর কি! রুমে যাও গিয়ে পড়তে বসো।
তুর পড়ার কথা শুনেই চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি করে বললো,, চলুন প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে।
তুর উঠে ডায়নিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো।
আনান তুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,, পড়া চোর একটা। যাই হোক আজ এই পড়াচুরি কাজে দিবে।
,
,
খাওয়া দাওয়া শেষে তুর আর আনান রুমে চলে গেল। তুর চেন্জ করে বেবী পিংক কালারের লেডিস টিশার্ট আর ক্রিম কালারের প্লাজু পরেছে।
আনান তুরকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
তুর বিছানায় বসতেই আনান তুরের দিকে তাকিয়ে বললো,, পড়ালেখা করবে না ?
তুর ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে বললো,, আমার ঘুম পাচ্ছে এখন। পড়তে বসলেই মাথা ব্যাথা করবে তাই এখন ঘুমোতে হবে।
তুর চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। আনান তা দেখে ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর তুর ঘুমিয়ে পড়লো।
আনান ব্যাস্ত হয়ে পড়লো তুরকে সারপ্রাইজ দিতে।
প্রায় পোনেবারোটায় আনান কাজ শেষ করে মিনি টেরেসের গ্লাস খুলে রুমে প্রবেশ করলো। তুরের পাশে বসে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। ছোট ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে আলতো হাতে তুরের গাল স্পর্শ করলো।
তুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীমি আওয়াজে বললো,, সারপ্রাইজ দেখে সারপ্রাইড্ হবে নাকি সক খেয়ে আমার চুল টানবে বউ?
আনান নিজে বলে নিজেই হেঁসে উঠলো। তুরতো তার ঘুমের রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আনানে কথা তার কান ওবদি পৌঁছাতে পারেনি।
আনান মুচকি হেসে তুরকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। তুরের মাথা ঠেকলো আনানের বুকে। আনান পা দিয়ে গ্লাসটা ধাক্কা দিয়ে পুরোটা খুললো। ফেইরি লাইটের মৃদু আলোতে পুরো ছাদটা আলোকিত। সেই আলোয় তুরের ঘুমন্ত মুখটা আরো বেশি মায়াবী লাগছে। আনান তুরের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। বারোটা বাজার আর একমিনিট বাকি। আনান তুরকে ডাকতে লাগলো ,,, তুর!!
চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমনে হয়েছে অবশ্যই জানাবেন
0 Comments
Please Do Not Enter Any Spam Link In The Comment Box.